দুর্নীতির খেসারত জনগণের ঘাড়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৭:১৯ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘গ্রাহক পর্যায়ে আবারো বাড়ছে বিদ্যুতের দাম!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডলারের দামবৃদ্ধি, আইএমএফের চাপ, বৈশ্বিক বাস্তবতা-সব মিলিয়ে ত্রিমুখী সংকটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত। এ অবস্থায় আবারো চাপছে গ্রাহকের ওপর মূল্যবৃদ্ধির খড়গ। এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা নীতি নির্ধারকদের, যা চলবে আগামী তিন বছর ধরে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব এর বক্তব্য হচ্ছে, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন আরো নাজুক করবে গ্রাহক স্বার্থ আর জ্বালানী নিরাপত্তাকে।
বলা বাহুল্য, নানামুখী সংকটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধুঁকতে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত সমানভাবে বিপাকে ফেলেছে গ্রাহকদেরও। ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। কিন্তু গত দেড় বছরেরও কম সময়ে এই দাম বাড়ে ৪ বার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারীতে গ্রাহক পর্যায়ে ৩ টাকা ৭৩ পয়সায় থাকা ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ১৪০ শতাংশ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। আর এ অবস্থা এবার আরো জটিল হওয়ার পালা।
বলা যায়, আমদানি নির্ভর বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত প্রায় সম্পূর্ণ ডলার কেন্দ্রিক। তেল, কয়লা, এলএনজি কিংবা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দেনা, বিদেশী কোম্পানীর পাওনা-সবই পরিশোধ হচ্ছে ডলারে। কিন্তু ডলারের আনুষ্ঠানিক মূল্য এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানোও, আবারো বাড়তি ব্যয়ের শংকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে ঘিরে।
এ প্রসঙ্গে ক্যাব এর জ্বালানী উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় কমিয়ে আনলে দাম বাড়াতে হবে না। বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের ক্যাপাসিটি অর্থাৎ সক্ষমতা অনুযায়ী যোগান দিতে পারছে না। ওইসব কেন্দ্রে পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে লুন্ঠন করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। ক্যাব এর উপদেষ্টা এসব কথা হালকা করে রেখে ঢেকে বলেছেন। কারণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মাফিয়াদের সম্পর্কে তার সম্যক ধারণা আছে। সাগর-রুনীর পরিণতির কথাও তিনি অবগত।
কিন্তু সত্য কথা এই যে, রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্ঠতম ক্ষতিকর ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী বিদ্যুৎ চুক্তি করা হয়েছে ভারতীয় আদানি গ্রুপের সাথে। এছাড়া অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে উৎপাদন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে খামকা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই আজিজ খানকে সিঙ্গাপুরের অন্যতম ধনী বানানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে। বৈদ্যুতিক টাওয়ারের হাজার টাকা মূল্যের নাটবল্টু কেনা হচ্ছে কয়েক লাখ টাকায়। এভাবে নানামুখী দুর্নীতি ও অনিয়মের ফলে যে ঘাটতি বা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে, সেই চাপ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের চাপে ইতোমধ্যে প্রায় পিষ্ঠ জনগণের ঘাড়ে। আর এই চাপ বছরের পর বছর অব্যাহত রাখার কথা বলা হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে তেল গ্যাসের দাম যখন সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে, তখন বাংলাদেশের জনগণকে তেল-গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের জন্য দিতে হচ্ছে উচ্চমূল্য তথা চরম খেসারত।