বিদেশে এদেশীয় দুর্নীতিবাজদের সম্পদের পাহাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৪, ১২:৩৫:০৬ অপরাহ্ন
একটি দেশে যদি ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, এতে খুশী হওয়ারই কথা সেদেশের জনগণের। কিন্তু সেই ধনী ব্যক্তিরা যদি দেশ ও জনগণকে প্রতারিত ও বঞ্চিত করে অন্যায়ভাবে সম্পদের মালিক হন, তবে তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং এতে খুশী হওয়ার কোন কারণ নেই। সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ৩৯৪ বাংলাদেশীর ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ৪৪১ টি সম্পত্তি রয়েছে। যার বড় অংশ দুর্নীতিবাজদের বলে মনে করা হচ্ছে। এদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ যখন আর্থিক অনটনের মধ্যে ধারদেনা করে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, তখন একশ্রেণীর মানুষকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফোর্বস ম্যাগাজিনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে দুদকের জনৈক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুদক তার সিডিউলভুক্ত অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে। বিদেশে অর্থ পাচারের যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, কমিশনের সেদিকে নজর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। তবে সব সংস্থার সমন্বয় থাকলে তা দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। দুদক বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনার নজির এর আগেই স্থাপন করেছে।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দু’টি বিষয় রয়েছে-একটি গ্রুপ দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ পাচার করে দিচ্ছে। আরেকটি গ্রুপ বিদেশে যাওয়ার পরে ফিরে আসছে না। দুর্নীতি বন্ধ না হলে দেশে থাকার মতো পরিবেশ তৈরী হবে না। এ কারণে ভবিষ্যত প্রজন্ম বিদেশে পাড়ি জমাবে। দেশের প্রতি আগ্রহ তৈরী করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করার সুযোগ থাকলে দুবাইসহ অনেক দেশেই অর্থ চলে যাবে।
বলা বাহুল্য, শুধু দুবাই নয়, কানাডা ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী অর্থ পাচার ও সম্পত্তি অর্জনের বিষয় নিয়ে গত ক’বছর ধরে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পাহাড় নিয়ে মিডিয়ায় বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার প্রায় নীরব, নিস্ক্রিয়। এ পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারের শীর্ষ মহলকে। ফলে এ ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম অব্যাহত রয়েছে। এমনকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এগুলো।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘অর্থ পাচার বাড়ছেই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, দেশ থেকে কতোভাবে অর্থ পাচার হয় তা বহুল আলোচিত। অর্থ পাচার রোধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও কেনো কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। জানা গেছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিপুল অংকের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়ে থাকে। হুন্ডির মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার দরুণ গত ২ বছরে আশংকাজনকভাবে বেড়েছে অর্থ পাচার। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে ব্যাংক ঋণে জালিয়াতির ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। এ সময় বিএফআইইউর অনুসন্ধানে ১ হাজার ১১২ টি সন্দেহজনক লেনদেন ধরা পড়েছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এসব জালিয়াতি ও সন্দেহজনক লেনদেনের ঘটনা ধরা পড়লেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোন কার্যকর কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না কর্তৃপক্ষকে। বরং বড়ো অংকের অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে এগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি উচ্চ আদালতের রুল জারি করে এসব অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত বা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় এদেশের ব্যাংক লুটপাটকারী ও অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের অর্থপাচার বাড়বে না-তো কমবে কি? বিদেশে তাদের অর্থ ও সম্পদের পাহাড় দিন দিন উঁচু হবে না-তো নীচু হবে কী? এমন প্রশ্ন এখন জাগতে পারে যে কোন সচেতন মানুষের মাঝে।