মৌসুমের দু’টি সংকট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩০:২৩ অপরাহ্ন
বর্ষা মৌসুম আসন্ন। পঞ্জিকার হিসাবে না হলেও ঝড় ও বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে এই মৌসুমের সূচনা হয়েছে। আর এদেশে এই মৌসুমের দু’টি বড় ধরনের জাতীয় বিপত্তি হচ্ছে বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে প্রাণহানি। সমস্যা দু’টি এতোই মারাত্মক যে, এগুলো নিয়ে শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয় বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ক’বছর আগে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। আর পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতিসংঘ বেশ কিছু অনুসন্ধান ও সমীক্ষা প্রকাশ করেছে ইতোমধ্যে। দিয়েছে বেশ কিছু পরামর্শ। এসব সত্বেও এই দু’টি দুর্যোগ ও বিপত্তি কমার কোন আলামত নেই। বরং দিন দিন এগুলো বেড়েই চলেছে। গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘বজ্রপাতে প্রাণ গেলো ৭ জনের’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, গত ১৮ মে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে নরসিংদীতে ৪ জন, টাঙ্গাইলে ২ জন ও গাজীপুরে ১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ১৭ মে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় পিতার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে এক শিশু বজ্রপাতে মারা যায়। একই দিন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বজ্রপাতে ৩ দিনে নিহত হন ৬ জন।
গত ৫ মে রাজধানীর আবহাওয়া অফিসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বজ্রপাত থেকে বাঁচার কিছু কৌশল বর্ণনা করা হয়। আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বজ্রপাত থেকে বাঁচার কৌশলের বিষয়ে বলেন, বিদ্যুৎ চমকাতে দেখার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে যদি বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পান তাহলে বুঝবেন সেটা আপনার দিকে আসছে বা সেটার দ্বারা আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আর যদি দেখেন বিদ্যুৎ চমকানোর ৩০ সেকেন্ড পর শব্দটা পেয়েছেন তাহলে বুঝবেন সেটা আপনার নিকট থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। সে সময় যদি নিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন তাহলে এক আঙ্গুলের ওপর ভর করে বসে পড়তে হবে। এবং সেটা দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদ অনেক কমতে পারে।
পানিতে ডুবে মৃত্যু বিশেষভাবে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু একটি অবহেলিত জাতীয় সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে এক থেকে ১৭ বছরের শিশুদের অপমৃত্যুর প্রধান কারণ হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু, যা যৌথভাবে নিউমোনিয়া, অপুষ্টি ও ডায়রিয়ায় মৃত্যুর চেয়েও বেশী। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৮ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এতে বলা হয়, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ সমূহ হচ্ছে, বয়স্কদের যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাব, অতি দারিদ্র্য, গ্রামাঞ্চলে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের অভাব, পুকুর-জলাধারে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব এবং সাঁতার না জানা। বাংলাদেশে প্রায়ই ৮-৯ বছরের শিশুদের সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যেতে দেখা যায়। যদিও একটি সুস্থ বাচ্চাকে ৪-৫ বছর বয়স থেকে সাঁতার শেখানো উচিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
উপরে ঝড় বৃষ্টির মৌসুমে এদেশের দু’টি প্রধান সমস্যা বা সংকট নিয়ে আলোকপাত করা হলো। এ দু’টি সংকট মোকাবেলায় প্রশাসন তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহের গুরুত্ব প্রদান, নজরদারি ও পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সাধারণভাবে সকলের সতর্কতা ও সচেতনতা আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়ে দৃষ্টি ও মনোযোগ দিবেন, যাতে বজ্রপাত ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর মতো অপঘাত মৃত্যু এড়ানো যায় এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।