লোভনীয় ফলের ফাঁদে ক্রেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৪, ১২:৩৫:২৮ অপরাহ্ন
ফল পাকুড়ের মাস জ্যৈষ্ঠ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে পাকা আম ও লিচুতে সয়লাব ফলের বাজার। এমনকি জ্যৈষ্ঠের শেষভাগ ও আষাঢ়-শ্রাবণের ফল কাঁঠালও প্রচুর ওঠছে বাজারে। গতকাল একটি মিডিয়ায় ‘অপরিপক্ক আম-লিচুতে সয়লাব ফলের বাজার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, মৌসুমের শুরুতেই বাজার দখল হয়েছে আম ও লিচু। বাজারে ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, অরুণা, আ¤্রপালিসহ পরিচিত নানা প্রজাতির আম না থাকলেও মৌসুমের শুরুতেই মিলছে হিমসাগর, গোলাপভোগ, গোবিন্দভোগ, বারিফল ও কাঠিমনসহ কয়েক প্রজাতির আম। পাশাপাশি উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে থাইল্যান্ডের জ্যাম্বো আম ও কয়েক প্রজাতির লিচুও। তবে দেশীয় আমের দাম আকাশ ছোঁয়া। প্রতি কেজি দেশীয় প্রজাতির আম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে।
অপর দিকে প্রতি একশ’টি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায়। তবে বাজারে এমন চড়া দামে ফল কিনতে একদিকে ক্রেতারা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব ফল বাজারে আসায় স্বাদ নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন ফলের বাজারে যে আম পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখতে আকর্ষণীয় হলেও স্বাভাবিকভাবে পাকা নয়। অপরিপক্ক কাঁচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এসব আমের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রং। পাকা আমের মতো দেখতে হলেও এতে নেই পাকা আমের স্বাদ। জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আমের সাথে দেশীয় অপরিপক্ক কাঁচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে পাকানো আম মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চড়া দামে এসব আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।
চিকিৎসকদের মতে, আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ইনজেকশন দেয়া হয়। আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে এটি অ্যাসিটিলিন নাম গ্যাস ছড়ায়। এতে আম দ্রুত পাকে। এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ত্বকের জ¦ালা, শ^াসকষ্ট এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দেয়। আবার ফল ব্যবসায়ীরাও আমা পাকাতে ‘ইথিলিন ট্রিটমেন্ট’ ব্যবহার করেন। এ সময় ফলকে ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আনা হয়। এই গ্যাস একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হরমোন, যা ফল দ্রুত পাকাতে সাহায্য করে। আমের মাধ্যমে এসব রাসায়নিক উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে ত্বকের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, জরায়ুর ক্যান্সার, লিভার ও কিডনির সমস্যা মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
লক্ষণীয় যে, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়। এসব আম সব দিক দিয়ে সমানভাবে পাকা দেখা যায়। গাছ পাকা আম আমের সবদিক কখনো সমানভাবে পাকে না। এসব আমে গাছপাকা আমের মতো মিষ্টি গন্ধ থাকে না। প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের চামড়ার ওপর এক ফোঁটা লবন দিলে তা গাঢ় নীল বা কালো বর্ণের হয়ে যায়। আর কেমিক্যাল পাকানো ফলে লবন দিলে রঙ অপরিবর্তিত থাকে।
বলা বাহুল্য, কেমিক্যাল যুক্ত আম বাইরে থেকে সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। তবে ক্রেতারা যদি কোন মৌসুমে কোন আম বা ফল পাওয়া যায় সে বিষয়ে সঠিক ধারণা রাখেন এবং রাসায়নিক দেয়া আম কেনা থেকে বিরত থাকেন, তা হলে অনেকাংশেই অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতরণা থেকে বাঁচা সম্ভব। এছাড়া বাজার ও আড়তে অভিযান চালিয়ে কেমিক্যালযুক্ত আম ও অন্যান্য ফল ধ্বংসসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। গণস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে তা করতে হবে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।