শেয়ারবাজারে আস্থাহীনতা চরমে
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৪, ১২:৪৪:১৩ অপরাহ্ন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানিয়েছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস গত রোববার (২০ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৮৯ টি কোম্পানীর মধ্যে ২৭৮ টির দর পতন ঘটে। অধিকাংশ কোম্পানীর এ ধরনের দরপতন শেয়ারবাজারে রীতিমত শংকা সৃষ্টি করেছে। অবশ্য শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা চলছে অনেক আগে থেকেই। গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘শেয়ারবাজার থেকে ৫ দিনে উধাও ৫ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গেলো সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিটিতেই দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। ঐ সময় শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সব ক’টি মূল্যসূচকও কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। সচেতন মহলের অভিমত, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার নিয়ে অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। অতীতে বাজার কারসাজির সাথে যারাই জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বা কারসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই বিনিয়োগকারীদের সামনে। এ কারণে অসংখ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির পরও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আস্থাহীনতায় ভোগেন তারা। যেসব কোম্পানীর বেশী সংখ্যক শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকে, ওই সব কোম্পানীর উদ্যোক্তারা প্রায়ই বাজার কারসাজির সাথে জড়িত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া পুঁজিবাজারে কিছু কোম্পানীর উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা কারসাজির মাধ্যমে কমমূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে শেয়ার কিনে নেন। আবার কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে আবার ওই কোম্পানীর শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে কিছু অসাধু উদ্যোক্তা বাজার কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে নিজেদের পকেট ভারী করেন।
বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন মহলের জনৈক শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শেয়ার মার্কেটে কেলেংকারীর অভিযোগ ওঠলে এমনকি প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দায়ের করা মামলা অন্যায়ভাবে খারিজ করে দেয়া হয়। তার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কারসাজির ফলে শেয়ার বাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ধস নামে। নিঃস্ব হয়ে যান কয়েক লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যা করেন কেউ কেউ। আর কারসাজির মূল হোতা পরিণত হন এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তিতে। তিনি আজো দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করছেন, তার টিকিটি স্পর্শ করার কেউ নেই। অবশ্য সম্প্রতি পুঁজিবাজারের কারসাজির অভিযোগে চিহ্নিত কিছু চক্রকে শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু এসবই আইওয়াশ ও নামেমাত্র শাস্তি বলে অনেকের অভিমত। একজন অসৎ ব্যক্তি বা কোম্পানী যদি কারসাজি করে ১০০ কোটি টাকা লুটে নেয়ার পর তাকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়, এতে তার কোন ক্ষতি নেই। ৫০ কোটি লাভ থেকে যাবে তার। কারাদন্ডের মতো কঠোর ব্যবস্থা না থাকায় শেয়ার মার্কেট লুটেরারা বেপয়োয়াভাবে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাসে গভীর ফাটল বা চিড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ফাটল বা চিড় মেরামত সহজ ব্যাপার নয়।