ভাগ্যের পরিহাস বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৪, ১২:৩০:৩০ অপরাহ্ন
কেউ যদি বলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থাৎ একজন দিনমজুর বা রিকশাচালকের মাসিক আয়ও ৩ লাখ টাকা, তবে নিশ্চয়ই তার এ বক্তব্য এদেশের কেউ বিশ্বাস করবেন না। অনেকে তার মস্তিস্কের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্নও তুলতে পারেন। কিন্তু সরকারী হিসাবে এদেশের মানুষের মাথাপিছু মাসিক গড় আয় ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থ বছর শেষ হতে আর অল্প কিছুদিন বাকী, এর আগেই চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সাময়িক হিসাব বলছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আগের অর্থ বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হবে। আর দেশের মানুষের মাথাপিছু মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলারে। গত সোমবার জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএস এর হিসাব অনুযায়ী এদেশের মানুষের মাথাপিছু মাসিক আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা।
অপরদিকে গতকাল এদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ায় ‘মানুষের আয় কম, ব্যয় বেশী, ছোট করতে হচ্ছে বাজারের ফর্দ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত একটানা ২৪ মাস ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরী বৃদ্ধির হার কম। এ তথ্যটিও দিয়েছে সরকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ব্যুরোর মতে, প্রতি মাসে যতোটা মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, মজুরী বাড়ছে তার চেয়ে কম হারে। বিপুল সংখ্যক মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের গতি বেশী। ফলে ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত কমছে। তাই খরচের গতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। বিবিএস-এর এই দুই পরিসংখ্যান নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেশের জনগণের আয় বৈষম্য যে কতোটা ভয়াবহ তা ফুটে ওঠে। একজন দিনমজুর মাসে ২৫/৩০ হাজার কিংবা তার চেয়েও কম আয় করলেও একজন সুবিধাভোগী শ্রেণীর মানুষের মাসিক আয় এক কোটি টাকারও বেশী হবে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের গড় আয় ২৫/৩০ হাজার টাকার বেশী হবে না কোনভাবেই। আর বাকী ২০ শতাংশ বিত্তবান সুবিধাভোগী শ্রেণীর মানুষ মাথাপিছু আয়ের অবশিষ্ট অংশের মালিক। আবার এদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের আয় আকাশচুম্বী, যাদের পক্ষে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ি কেনা সম্ভব, লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যবসায় বিনিয়োগ করা সম্ভব। আর এটাই বর্তমান বাস্তবতা।
কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিলো। এতে দেখা যায়, একজন ভিক্ষুক জনৈক বিদেশীর কাছে ভিক্ষার জন্য হাত বাড়িয়েছে। তখন ঐ বিদেশী বলছে, আরে তুমি ভিক্ষা চাইছো কেনো, তোমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় তো মাসিক ৩ লাখ টাকা! বিষয়টা যুগপৎ হাস্যকর ও মর্মান্তিক। সরকারী মাথাপিছু হিসাবে একজন হতদরিদ্র মানুষেরও গড় আয় ৩ লাখ টাকা। অদৃষ্টের পরিহাস হচ্ছে এই যে এটা যদি বাস্তব বা সত্য হতো, তবে এই ভিক্ষুক বা দিনমজুর ভিক্ষা না করে বা খালি গায়ে রোদবৃষ্টিতে দিনমজুরের কাজ না করে কয়েক লাখ টাকা দামের গাড়ি চালাতো, আলিশান বাড়িতে বসবাস করতো।
চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, বাংলাদেশে বিত্তবান ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের মাঝে আয় বৈষম্য যেমন আকাশ পাতাল তেমনি এটা কমার কোন আলামত নেই, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না, বরং কমছে। অনেকেই চাকুরী বা কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন দেশের বিরূপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। এ অবস্থায় দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সংবাদ এদেশবাসীর জন্য কোন সুসংবাদ নিয়ে আসছে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা সুসংবাদ না হয়ে দুঃসংবাদ বা ভাগ্যের পরিহাস হিসাবে প্রতিভাত হচ্ছে আর্থিকভাবে দুর্ভোগপীড়িত মানুষের কাছে।