সিলেটে অশান্তির তাপদাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৪, ১২:৩০:৫৬ অপরাহ্ন
গতকাল সিলেটে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এটি চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটাও ছিলো রেকর্ড, যা গত ১৬ মে তারিখের রেকর্ড ভেঙ্গে তৈরী হয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিযেছে, শুক্রবার সকাল থেকে সিলেটে মৃদু থেকে মাঝারি তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় দমকা হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাপপ্রবাহের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সিলেটের জনজীবন। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হননি নগরীর বাসিন্দারা। তবে খেটে খাওয়া মানুষজনকে প্রচন্ড তাপ উপেক্ষা করে কাজে বের হতে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও সিলেট অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিলো সহনীয়। মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত স্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঢাকা, যশোর ইত্যাদি জেলায় যখন বৃষ্টির কোন নাম নিশানা ছিলো না, তখন সিলেট বার বার নেয়ে ওঠেছিলো প্রশান্তির বর্ষণে। কিন্তু গত ২/৩ দিন যাবৎ পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশান্তির সিলেট তাপদাহে অশান্তির জায়গা হয়ে ওঠেছে। সিলেটের প্রচুর গাছপালা, হাওর ও অরন্য পাহাড় ও তাপদাহ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিষয়টি সিলেটবাসীকে বিস্মিত করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রাও প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার দরুণ বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। নতুন নতুন রোগের উদ্ভব হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান রোগগুলোর সিভিয়ারিটি অর্থাৎ ভয়াবহতা বাড়ছে। এর ফলে মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ও বাডড়ছে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদনশীল ও তীব্র গরমে মানুষের হিটস্ট্রোক হচ্ছে। এর ফলে বাইরে যারা কাজ করেন তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। এর প্রভাব পড়ছে পরিবার, অর্থনীতির ওপর।
এ অবস্থায় বেশী বেশী গাছপালা রোপনের মাধ্যমে কুলিং সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। তাপমাত্রার ফলে যেসব রোগ ব্যাধি হচ্ছে, সেগুলোর প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সী ইউনিট গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের ইউনিট শুধু জরুরী অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে। তারা এ সময় সুশৃংখলভাবে বিভিন্ন পরামর্শদান ও প্রশিক্ষণের কাজ করবে। সেটি কোভিড বা ডায়রিয়ার প্রকোপ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, হিটওয়েবসহ বিভিন্ন ইমার্জেন্সীতে তদারকি করবে।
চিকিৎসকদের মতে, তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিগতভাবেও কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান, হালকা পোশাক পরিধান, বাইরে বের হওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন এবং নিয়মিত শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করা।
এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী বেড়েছে। অল্প সময়ে এতো তাপমাত্রা বৃদ্ধি বড় ধরনের অশনি সংকেত। আগে মার্চ মাসে তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে যেতো। কিন্তু ১৮৮০ সাল থেকে তা ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে। বর্তমানে অক্টোবর মাসেও তাপদাহ থাকছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি পশু পাখির জীবনচক্রেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শুধু বনের পশুপাখি নয়, কিছুদিন আগে পোল্ট্রি ফার্মের অগণিত মুরগী মারা গেছে তীব্র গরমে। এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মাছসহ জলজ প্রাণীর খাদ্য সংকট ও জীবনধারণও হুমকির মুখে পড়ছে। জলজ প্রাণীয় ডিম দিলেও অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে জল ও স্থলের উভয় প্রাণীকূলই তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরী।