গাজা যুদ্ধের গ্যাঁড়াকলে ইসরাইল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২৪, ১২:৩১:৩২ অপরাহ্ন
কথায় আছে একটি পঁচা আপেল এক ঝুড়ি আপেলকে নষ্ট করে দিতে পারে। বর্তমান সময়ে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি এ ধরনের একটি বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গোটা বিশ্বের সকল দেশের স্বস্তি কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘ যখন গাজার রাফাহ এলাকায় হামলা ও গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে, তখন ইসরাইল তার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়েছে। হত্যা করেছে প্রায় অর্ধশত বাস্তুচ্যুত শরণার্থী, যাদের অধিকাংশই নিরীহ নিরস্ত্র নারী ও শিশু। এভাবে গত ৭ মাসে তারা ৩৬ হাজারেরও বেশী ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে বিশ্বের বুকে নৃশংস নিষ্ঠুরতম জাতি ও দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনেক সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলী সামরিক বাহিনী রীতিমতো উন্মত্ত ও উন্মাদের মতো আচরণ করেছে। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত: গত ৭ মাসের গাজা যুদ্ধে ইসরাইল তাদের কাংখিত লক্ষ্যের কিছুই অর্জন করতে পারেনি। একটি প্রতিষ্ঠিত সামরিক শক্তিধর দেশ হওয়া সত্বেও হামাস নামক একটি অতি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর সাথে লড়াইয়ে মার খেয়ে এখন তাদের ত্রাহি ত্রাহি দশা। এটা বিশ্বে তাদের এতোদিনের গড়ে তোলা ভাবমূর্তিতে যেমন ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে, তেমনি তাদের অহংবোধকে ভেঙ্গে চুরমান করে দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ আগে বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষভাবে পাশ্চাত্যের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী দেশগুলো মুসলিম অধ্যুষিত আরব দেশগুলোর মাঝে অনেকটা একাকী, অসহায় ও কোনমতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে সচেষ্ট একটি দেশ হিসেবে সহানুভূতির চোখে দেখতো। অকাতরে সাহায্য সহযোগিতা করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব দেশের কাছে ইসরাইলের আগ্রাসী চেহারা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। নিরীহ ফিলিস্তিনীদের ওপর তাদের নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট তাদের কাছে। একই সাথে তাদের নিষ্ঠুরতার সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের অমানবিক ভূমিকাও এখন স্পষ্ট বিশ্ববাসীর কাছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণই শুধু নয়, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেছেন ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে। আগ্রাসী ও গণহত্যাকারী দেশ ইসরাইলকে অকাতরে অস্ত্র সরবরাহ করায় নিজ দেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সচেতন ও বিবেকবান মানুষের কাছে যুক্তরাষ্ট্রও একটি মানবতা বিবর্জিত দেশে পরিণত হয়েছে। এতে গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন ও কলুষিত হয়েছে। তৃতীয়ত: হামাসসহ বিভিন্ন প্রতিরোধ সংগঠনের অকুতোভয় যোদ্ধাদের হাতে মার খেয়ে ইসরাইল এখন বিভিন্ন রণক্ষেত্র থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাজা থেকে হামাস নির্মুলের প্রতিজ্ঞা ও স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে নেমে এখন তাদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাহস, কৌশল ও মোটিভেশনের কাছে নিপীড়ক গণহত্যাকারী ইসরাইলী সৈন্যরা এখন ফাঁদে পড়া ঘুঘু পাখির মতো অসহায় শিকারে পরিণত হচ্ছে। হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনের ¯œাইপার, ফাঁদ ও অ্যাম্বুশে পড়ে অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে। এ অবস্থায় ইসরাইলীরা এখন রাফাহ থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে, ইতোমধ্যে ইসরাইলের বহু সমরবিদ জেনারেল ও সাবেক মোসাদ প্রধান গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের পরাজয়ের বার্তা প্রদান করেছেন। অপরদিকে ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে তার জনগণ। হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলীদের মুক্ত করা দূরে থাক, নতুনভাবে আরো ইসরাইলী সৈন্য বন্দী হতে দেখছেন তারা। এ অবস্থায় নেতানিয়াহু সরকারের এখন বেহাল দশা। গাজা যুদ্ধ তার জন্য শাখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি না পারছেন যুদ্ধে সফল হতে, না পারছেন বিপদের গ্যাঁড়াকল থেকে বেরিয়ে আসতে।