বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৪, ১:০০:৩৩ অপরাহ্ন
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এদেশে প্রতি তিন হাজার মানুষের জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। এই পরিসংখ্যানে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈন্যদশার চিত্র ষ্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তেমন অগ্রগতি সাধিত হয়নি, বাড়েনি সেই অনুপাতে প্রকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা। এছাড়া বর্তমানে প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি, প্রাপ্ত তথ্যের বিশে¬ষণের জন্য পর্যাপ্ত লোকজনের অভাব এবং রোগ প্রতিরোধের রোগ নিরাময়ের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপের ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।
গত এক যুগে এদেশে বেশ কিছু প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে এসব কলেজ থেকে বহু চিকিৎসক বেরিয়ে এসেছেন। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো থেকেও পাশ করে চিকিৎসক বেরোচ্ছেন। তা সত্বেও এদেশের জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসকদের সংখ্যা অস্বাভাবিক কম। সম্ভবতঃ বিশ্বের খুব কম দেশেই জনসংখ্যা ও চিকিৎসকের এত বৈষম্যমূলক ও অস্বাভাবিক অনুপাত বিদ্যমান। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা প্রায় সবাই নগর ও শহরে থাকতে আগ্রহী। পারতপক্ষে কেউই গ্রামে যেতে চান না। ফলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত ও দক্ষ চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা থেকে।
ফলে গ্রামাঞ্চলের এই মানুষকে চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে অনভিজ্ঞ আধা বা সিকি ডাক্তার এবং হাতুড়ে কথিত চিকিৎসকদের উপর। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যখন এমনি নাজুক, এ অবস্থায় অনেকেই বিকল্প চিকিৎসার উপায় বের করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরা মনে করি, অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি দেশিয় হার্বাল বা ভেষজ চিকিৎসার উপর জোর দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদীয়, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প উপায়। এদেশের মাটি ভেষজ ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে যদি ভেষজ উদ্যান গড়ে তোলা যায়, তবে আয়ূর্বেদীয় ও ইউনানীয় ওষুধের কাঁচামালের অভাব হবে না।
এদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই সেক্টরকে যদি আরো উন্নত, যুগোপযোগী ও সমৃদ্ধ করা যায়, তবে কাংখিত বিকল্প চিকিৎসার একটি অন্যতম পন্থা লাভ করা সম্ভব। এজন্য দেশে অধিক সংখ্যক হোমিও কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে তোলা জরুরী। মানসম্পন্ন হোমিও ওষুধ প্রস্তুত ও বিপনণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা মনে করি, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দেশের বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্য ও দুরবস্থা লক্ষ্য করে দেশে স্বল্প খরচে চিকিৎসার উপায় বের করার যে আহবান জানিয়েছেন, তা এদেশীয় ভেষজ চিকিৎসা এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির উন্নয়নের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব। আর এজন্য সরকারকেই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের প্রত্যাশা, সরকার বিশেষভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর দেবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে আনয়ন করবেন একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।