দুঃসময়ে দায়সারা বাজেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০২৪, ১২:৩৫:০৩ অপরাহ্ন
গতকাল জাতীয় মিডিয়ায় ‘কালকে বাজেট হলো, আজকেই দাম বেশী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটের ইতিবাচক প্রভাব নেই বাজারে। নিত্যপণ্যের দাম তো কমেইনি বরং বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আলু ও ডিমের দাম। কোরবানী ঈদের আগে চড়া গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, চিনির দামও। বাজেটে ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকায় হতাশ ক্রেতারা। বাজেটে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক ২ থেকে এক শতাংশ করা হলেও দাম কমার লক্ষণ নেই। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ডঃ ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ও নি¤œ আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকে ক্ষত দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। সুতরাং এই বাজেট দিয়ে চলমান সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেটটি হলো। আমাদের প্রত্যাশা ছিলো এই বাজেট উদ্ভাবনী হবে। এখানে সৃজনশীল ও কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোন উন্নয়নের সমাধান দিতে পারবে না। নতুন বাজেট আমাদের কাছে অতীতের বাজেটের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, ক্রান্তিকালীন সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে সেগুলো সমাধানে এই বাজেটে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ বা দিক নির্দেশনা দিতে পারেনি।
সচেতন মহলের মতে, কর ব্যবস্থায় ধনীরা বেশী কর দেবেন, মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষ কর দেবেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেটে এ ধরনের কোনও বিধান রাখা হয়নি। বরং নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচের ওপর নতুন করারোপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়বে। বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচও বাড়বে। শুক্রবার রাত থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন কল রেট। যদিও মোবাইল ফোন এখন আর বিলাসিতা নয় বরং জরুরী প্রয়োজন। সবশ্রেণীর মানুষই এর ব্যবহারকারী। শুধু মোবাইল ফোনই নয়, আগামী অর্থ বছরে রাজস্ব আয় বাড়াতে গিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য ও সেবায় শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সমালোচকদের মতে, অর্থনীতির এমন দুঃসময়ে অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করেছেন, এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য স্বস্তির খবর কম। উল্টো করারোপের চাপ। অতি ধনীদের উপর আলাদা করে বাড়তি কোন কর আরোপ করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ধান, চাল, গম, আটা ময়দা সহ নিত্যপণ্যের ওপর উৎসে কর ২ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করায় নি¤œ ও মধ্যবিত্তের জন্য খানিকটা স্বস্তির খবর। কিন্তু বাজারে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এবং সিন্ডিকেটের কাছে বন্দী থাকায় কর হ্রাসের এই সুফল হয়তো ভোগ করতে পারবেন না সাধারণ মানুষ, এমন আশংকা সচেতন মহলের।
সর্বোপরি এবার এক কঠিন সময়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে যখন মূল্যস্ফীতি বিশেষভাবে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মূল্যস্ফীতির এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষ কোন সাহসী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। গতানুগতিক ধাঁচের বাজেটই প্রস্তাব করা হয়েছে এবারো।