বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাবে কে?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২৪, ১২:৩৫:১৬ অপরাহ্ন
গতকাল বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগেন অর্ধেকেরও বেশি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির পর নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারেন না অনেকে। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান, হলের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টি, জ্যৈষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলি, যৌন হয়রানি, ভবিষ্যত পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তা, মন খুলে কথা বলতে না পারার কারণে হতাশা ও বিষণœতায় ভুগতে থাকেন অনেক শিক্ষার্থী। প্রচ- মানসিক অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পরার কারণে ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে আত্মহত্যার চিন্তা জাগে। আর ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যত পেশাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন এর এক জরিপে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
জরিপে বলা হয়, প্রায় ৮০১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে হতাশার বিভিন্ন উপসর্গে ভোগেন। তাদের ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, কোন কিছু উপভোগ না করা, ঘুমের ধরণ পরিবর্তন, আত্মহত্যার চিন্তা, কাজে মনোযোগ দিনে না পারা ইত্যাদি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। সরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ৮৩ শতাংশ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা এ ধরণের উপসর্গের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ জানিয়েছেন, দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকুরি করতে চান, প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবসা বা উদ্যোক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, আর মাত্র ৭ শতাংশ বেসরকারি চাকুরি করতে চান।
বলা বাহুল্য, শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষাকে মেরুদন্ডের শীর্ষদেশ বা মাথা বললে অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু দেখা গেছে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যে পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার জন্য যথেষ্ট অনুকূল নয়। বিশ^বিদ্যালয়ে পাঠকালীন সময়ে তাদেরকে বিস্তর অপ্রত্যাশিত ও অবাঞ্চিত পরিস্থিতি ও পরিবেশের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এর ফলে তাদের শিক্ষা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি একজন সুস্থ সবল চিন্তা ও ত্ত্বাশক্তির অধিকারী দেশের যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠতে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন একজন শিক্ষার্থীকে যদি তার ভবিষ্যত জীবন বা পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতে হয়, তবে সে সুস্থ মস্তিষ্কে শান্ত মনে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না। এ সময় হতাশা ও বিষণœতা থেকে যদি তার মনে আত্মহত্যার চিন্তা জাগে, তবে সে কিভাবে তার জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার প্রস্তুতি নেবে? অথচ দেখা যাচ্ছে, এদেশের বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে এ ধরণের প্রতিকূল পরিবেশ ও চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে উচ্চশিক্ষা তথা বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এদিক দিয়ে বিশে^র উন্নত দেশসমূহের বিশ^বিদ্যালয়গুলো উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। ঐসব বিশ^বিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য অর্জনে অনুকূল ও সহায়ক। তাই বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো শিক্ষার্থী বিপুল অর্থ ব্যয় সত্বেও ঐসব বিশ^বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে, ডিগ্রি অর্জন করছে। এভাবে একটি উন্নত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের দিকে ছুটছে। এতে একদিকে লাভ হলেও অন্যদিকে বড় ধরণের ক্ষতি হচ্ছে। এ দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশেী শিক্ষা ও ডিগ্রি পেয়ে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও দেশ থেকে মেধাবী ছেলেমেয়েরা চিরতরে চলে যাচ্ছে। বিদেশী ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে ভালো চাকুরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে, অনেকে বিদেশে পড়াশোনা করে থেকে যাচ্ছে বিদেশেই। এভাবে ভয়াবহ ‘ব্রেডড্রেন’ এর শিকার হয়ে বাংলাদেশ ক্রমশঃ মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থার জন্য দায়ী বিশ^বিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলো দূর করবে কে? কে ফিরেয়ে আনবে শিক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু ও অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ?