জলাবদ্ধতা নিরসনে যা করণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২৪, ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন
হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও ডুবছে কেনো সিলেট শহর এমন প্রশ্ন এখন সিলেট নগরীর সচেতন বাসিন্দাদের। গত শনিবার দিবাগত রাতের ২/৩ ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা। বাসাবাড়ি, দোকানপাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডুবে যায় রাস্তাঘাট। এর ফলে বাসিন্দারা হয়ে পড়েন পানিবন্দি। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে আছেন স্থানীয় লোকজন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ১৪ বছরে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকার কাজ করেছে সিটি কর্পোরেশন। এর বাইরে চলতি বছর তিনটি ড্রেন নির্মাণে ব্যয় হয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি আরো ৫৫ কোটি টাকার কাজ চলছে। সম্প্রতি ৩শ’ কেটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এছাড়া পাউবো সুরমা নদীর নগর অংশ খননে খরচ করেছে ৫০ কোটি টাকা। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার পর নগরের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতা দূর করতে সিটি কর্তৃপক্ষ ও পাউবো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এতে কাংক্সিক্ষত সুফল পাওয়ার পরিবর্তে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে জলাবদ্ধতার সংকট আরো বেড়েছে। তাহলে এতো টাকা খরচ করে নগরবাসীর কী লাভ হলো? এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে নগরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর ঠিক দুই বছর পর সপ্তাহখানেক আগে আবারও নগরে একই চিত্র দেখা যায়। হাজার কোটি টাকা খরচের পরও নগর জলমগ্ন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। বাপা বলেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে নিশ্চয়ই ঘাপলা ও দুর্নীতি আছে। না হলে এতো টাকা খরচের পরও কেনো শহর ডুববে? অতীতেও সিলেটে প্রচুর বৃষ্টি হতো, তবে এমনভাবে শহর কখনো ডুবেনি। এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্বেও শহর ডুবছে কেনো?
অনেকের অভিযোগ, যদি নদী ও ছড়া পরিকল্পিতভাবে আরো গভীর করার পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন করা হতো, তাহলে নগরের বন্যা পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ রূপ নিতো না। নগরী দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালগুলো যথাযথ খননের অভাবে পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে।
অপরদিকে সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখার বক্তব্য হচ্ছে, ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছড়া খনন, ছড়ার পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ইউ টাইপ ড্রেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নালা নর্দমা প্রশস্তকরণসহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিটি কর্পোরেশন। চলতি বছর একইখাতে সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরো প্রায় ৫৫ কোটি টাকার কাজ চলছে। এর বাইরে নগরীতে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩শ’ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। টাকা পেলেই এ কাজ দ্রুততার সাথে শুরু হবে। তাদের মতে, প্রকল্প ঠিকভাবে হয়েছে বলেই এখন আগের তুলনায় জলাবদ্ধতা কমেছে। এখন চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সুরমা নদী পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকায় নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালের পানি নামতে পারছে না। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে সুরমা নদী খনন ও শহর রক্ষা, বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।
লক্ষণীয়, সুরমা একটি পাহাড়ি নদী। প্রতি বছর এই নদী দিয়ে পানির সাথে প্রচুর পলিমাটি আসে উজানের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। ফলে নদীটির বিভিন্ন স্থানে পলিমাটি জমে চর বা চড়া সৃষ্টি হয়েছে। তাই শুকানো মৌসুমে নদীর অনেক স্থানে, পানির প্রবার এতোই কম থাকে যে, লোকজন হেঁটে নদী পার হতে পারে। এভাবে দিন দিন নদীর নাব্যতা ও গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। আর প্রভাব পড়ছে আশেপাশের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। সিলেট নগরী এমনি পরিস্থিতির বড়ো শিকার। তাই সর্বাগ্রে নদী ও এর পাশাপাশি নগরীর ছড়া ও খাল গভীরভাবে খনন করা দরকার। দরকার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ। এসব কাজ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে, অন্যথায় খুচরো ও হাতড়ে হাতড়ে কাজ করানো হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। বিষয়টি মনে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে।