আফগানিস্তানের চমক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৪, ১২:৩৫:৪১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘তালেবান শাসনে আফগানিস্তানের অভূতপূর্ব উন্নতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈরী আমেরিকাসহ তার পশ্চিমা দেশগুলোর মিডিয়ায় আফগানিস্তান ও তালেবান সরকারকে নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হওয়া একটি নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু এই পশ্চিমা মিডিয়াই সম্প্রতি এমন কিছু সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা চমকে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। যেমন তালেবান সরকার কোন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পেলেও বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করছে বৃহৎ শক্তি চীন, রাশিয়াসহ তুরস্ক আরব আমিরাত, সৌদিআরব, কাতার ও পাকিস্তানের সাথে। কঠোর হস্তে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়েছে তালেবান সরকার। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা মুদ্রা হচ্ছে আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানি। এমনকি পারফরমেন্সে শক্তিশালী মার্কিন ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে এই মুদ্রা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে তালেবান সরকার। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলোর সাথে ৬৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে আফগান সরকার। বিপুল আয়তনের জমিতে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চাষযোগ্য করতে নিজস্ব প্রযুক্তি ও অর্থায়নে ১০৮ মিটার প্রস্থ ও ২৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশটেপা ক্যানাল অর্থাৎ খাল তৈরী করেছে তালেবান সরকার। একের পর এক খনিজ সম্পদ আবিস্কার হচ্ছে আফগানিস্তানে। ডালিমের রস থেকে উৎপাদিত ‘পামির কোলা’ নামক কোমল পানীয় সাড়া জাগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের মানুষের মাঝে। ইতোমধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে সুপার কার তৈরী করেছে দেশটি।
বলা বাহুল্য, ক্ষমতায় আসার পর ২ বছরের মধ্যে আফিম চাষি ৯৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলেছে তালেবান সরকার। অথচ বরাবরই আফগান অর্থনীতির একটি বড় যোগান এসেছে এই আফিম থেকে। এতদিন বিশ্বের ৮০ ভাগ আফিম উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত ছিল দেশটি। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার সরকারগুলো এই পপি চাষ বা আফিম উৎপাদন কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বরং দিন দিন তা বেড়েছে। বর্তমানে তালেবান সরকার তা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর পরিবর্তে জাফরান উৎপাদন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম দামী মশলা হচ্ছে জাফরান, যার এক কেজির মূল্য বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫ লাখ টাকারও বেশী। সেই জাফরান উৎপাদনে বিশ্ব স্বীকৃতি লাভ করেছে দেশটি। বিশ্বের সবচেয়ে ভালো মানের জাফরান উৎপাদকের স্থান লাভ করেছে আফগানিস্তান। বেলজিয়াম কর্তৃক ইন্টারন্যাশনাল টেস্ট ইনস্টিটিউট বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আফগানিস্তানের জাফরান বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশটির ২৬ প্রদেশে জাফরান চাষ উৎপাদিত হয় দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জাফরান। গত বছর ভারত, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশে ৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রায় ৩০ টন জাফরানি রপ্তানি করেছে আফগানিস্তান।
যা-ই হোক, যে আফগানিস্তানের মাত্র বছর দুয়েক আগেও দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব মিডিয়া বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো, সেই আফগানিস্তানের এখন ভিন্ন চেহারা। যে আফগানিস্তানে ৯৩ শতাংশ নাগরিক যথেষ্ট খাবার পাচ্ছে না বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেই আফগানিস্তানে এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, জীবনযাত্রা সহজসাধ্য হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তারা কাবুলের চেয়ে দেড়গুণ বড় ‘নিউ কাবুল সিটি’ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। বলা যায়, এসবই সম্ভব হচ্ছে সুশাসন ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার কারণে। দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে তারা বদ্ধপরিকর। আর ইসলামী সততার আদর্শভিত্তিক শাসনের ফলে সরকারের ভেতরে ও বাইরে দুর্নীতি না থাকায় একসময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত ও হতদরিদ্র আফগানিস্তান আজ তৃতীয় বিশ্বের প্রকৃত অর্থেই রোল মডেল হতে চলেছে। অপরদিকে দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ এখন অপার সম্ভাবনা ও সম্পদ সত্বেও দারিদ্র্য ও হতাশার মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে।