সিলেটে কমেছে চা উৎপাদন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বৈরী আবহাওয়া, অনাবৃষ্টি ও শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সিলেটে কমেছে চায়ের উৎপাদন। এছাড়া বাজারে চায়ের দাম কমে যাওয়ায় বাগান মালিকপক্ষ পর্যাপ্ত পরিচর্যা নিতে অনিহা প্রকাশ করায় চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। গত অক্টোবর পর্যন্ত উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ায় চা বোর্ডের কর্মকর্তা ও উৎপাদকেরা লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কায় আছেন। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৭ কোটি ৬৬ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৩ কোটি ১৩ লাখ কেজি চা উৎপাদন হতে হবে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত বছরের শেষ দুই মাসে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৯৮ লাখ কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দুই মাসে ১ কোটি ১৫ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন করা দরকার, যেটাকে অসম্ভবই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে বাগানমালিক, ব্যবসায়ী ও চা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন আশানুরূপ না হলেও দেশে চায়ের ঘাটতি হবে না। কারণ, গত বছরে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। রপ্তানির পর উদ্বৃত্ত থাকা চা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করা যাবে। ফলে উৎপাদন কিছুটা কমলেও আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না।
এদিকে একই পরিস্থিতি সিলেটেও। আন্দোলনসহ নানা কারণে চায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছেনা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, উৎপাদনের মৌসুমে দেশের অন্যতম ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসির) ১২টি চা বাগান বন্ধ ছিলো। মজুরি না পেয়ে এসব বাগেনের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন প্রায় তিন মাস। এর প্রভাব পড়েছে দেশের জাতীয় চা উৎপাদনে। এছাড়া টাকার অভাবে সব বাগানে সময়মতো সার দিয়ে পরিচর্যা না করতে পেরে গত বছরের চেয়ে উৎপাদন কমেছে। এছাড়া চা চাষের জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি কিন্তু তুলনামূলক ভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় চা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে।
চা বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশের ছোট বড় ১৬৯ টি বাগানে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা পাতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। কারন শেষের তিন মাসে চা বাগানে সবুজ চা পাতা তেমন সংগ্রহ করা যায়নি। ২০২৩ সালে দেশের সব বাগান মিলে ১০কোটি ২৯ লাখ চা পাতা তৈরি করা হয়েছিল। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ১৩ লাখ চা পাতা উৎপাদন করা কথা। কিন্তু এটি সম্ভব হয়নি। কারন এই সময় চা বাগানে তেমন পাতা মিলেনি।
হবিগঞ্জ-মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর চা বাগানের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম ফকির বলেন, এনটিসি ১২ বাগানে দীর্ঘদিন বাগান বন্ধ থাকায় লক্ষমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আগস্ট থেকে নভেম্বর তিন মাস ১৫ হাজার শ্রমিক বাগানে কাজ থেকে বিরত ছিল। এটি উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ চা বাগান মালিক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ২০২৪ সালে দেশের চা বাগানগুলোতে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারনে অনেক চা বাগানের কারখানা দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকের মুজুরি দিতে না পারায় এনটিসির ১২টি বাগান তিন মাসের মত বন্ধ ছিল। টাকার অভাব অনেক বাগান মালিক বাগানে সময় মত প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে পারেনি। এছাড়া ২০২৪ সালে বৃষ্টি হয়েছে তুলনামূলক বেশি।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে গেল বছর চা বাগানে আশানুরূপ উৎপাদন হয়নি। সমস্যা লেগেই ছিল। এ বছর চায়ের উৎপাদন কম হওয়ায় চট্রগাম, শ্রীমঙ্গল ৩০ টি নিলাম বাজারে চা সরবরাহ কমেছে। এ বছর নিলাম প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ২১০টাকা ৫৬ পয়সা। গত বছর ছিল ১৯২ টাকা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় চায়ের দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। গত বছর এক কেজি চায়ের উৎপাদন খরছ ছিল ২২৬ টাকা। এ বছর চা সংশ্লিষ্ট সব উপকরণের দাম বাড়ার কারনে উৎপাদন খরছ আরো বেড়েছে।
একদিকে চায়ের উৎপাদন কমেছে, অপরদিকে বেড়েছে খরছ। তাই এ বছর বাগান মালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিস্টরা।চা বেচাকেনা মধ্যস্থতাকারি ন্যাশনাল ব্লেকার্সের সিনিয়র ম্যানেজার অনজন দেব বর্মণ জানান, নিলামে গত বছরের চেয়ে এ বছর চায়ের সরবরাহ কমেছে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা সাড়ে ৯ কোটি কেজি। যে পরিমাণ চা পাতা বাগানে উৎপাদিত হবে দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।সিলেট, মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ ও চট্রগাম মিলে দেশে ছোট বড় ১৬৯ চা বাগানে রয়েছে।তারাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, নানা কারণে সিলেটে এবার চায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টির কারণে আশানুরুপ ফলন হচ্ছেনা। বাজারে চায়ের কাংখিত দাম না থাকায় বাগান মালিকপক্ষ পর্যাপ্ত পরিচর্যা নিতে অনিহা প্রকাশ করেন। এছাড়া টাান শ্রমিক আন্দোলনে সময় মতো চা উত্তোলন না হওয়ায় পাতা বিনষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে এবছর সিলেটে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছেনা।