মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩:১৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রমজানের মাগফিরাতের দশদিনও শেষের পথে। আমরা পদার্পণ করছি নাজাতের দশকে। এ দশকের কোনো এক বেজোড় রাতে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদর। যে রাতকে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত বলে অভিহিত করেছেন। এ রাতেই নাজিল হয় মহা গ্রন্থ আল কুরআন। তবে সে বেজোড় রাত কয় তারিখ তা পরিষ্কার করা হয়নি। আর তাই মুসলমানরা আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীর পাশাপাশি লাইলাতুল ক্বদর পাবার আশায় নাজাতের পুরোটা দশক ইতিকাফ করে থাকেন। ইতিকাফ ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নবী সা. ইতিকাফকে খুবই গুরুত্ব দিতেন। তিনি নিয়মিত প্রতি বছর ইতিকাফ করতেন। ইন্তিকাল পর্যন্ত রাসূল সা. তা পালন করেছেন। একবার কোনো কারণে ইতিকাফ করতে পারেননি বলে পরের বছর বিশদিন ইতিকাফ করেন।
ইমাম তিরমিজী র. হজরত আনাস রা. থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সা. প্রতি রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর তিনি ইতিকাফ করতে পারেন নি। সে জন্যে পরের বছর বিশদিন ইতিকাফ করেন।
রমজানের শেষ দশদিনে ইতিকাফ করা সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ কেফায়া। অর্থাৎ মুসলমানদের সামষ্টিকভাবে এ সুন্নাতের ব্যবস্থাপনা করা উচিত কারণ হাদিসগুলোতে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
এজন্যে মুসলমানগণ যদি সামষ্টিকভাবে এ সুন্নাত পরিত্যাগ করে তাহলে গুনাহগার হবে। যদি এলাকার কিছু লোকও এ সুন্নাত পালনের ব্যবস্থাপনা করে তাহলে, যেহেতু তা সুন্নাতে কেফায়া, এ অল্প লোকের ইতিকাফ সকলের জন্যে যথেষ্ট হবে।
আরবি ‘ইতিকাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে বা ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে। এর উদ্দেশ্য আল্লাহর আনুগত্য, সওয়াব অর্জনের প্রত্যাশা এবং লাইলাতুল কদর লাভের আশা করা। এ কাজের দ্বারা একদিকে যেমন ইতিকাফকারী সকল ধরনের অহেতুক কথাবার্তা ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারবে এবং অন্যদিকে আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হয়।
রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ সম্পর্কে বায়হাকীর একটি হাদিসে এসেছে নবী করীম সা. বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ এছাড়া তিরমিজী শরীফের অপর একটি হাদিসে রাসূল সা. আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক দিনের ইতিকাফ করলো, তার ও দোজখের মধ্যখানে আল্লাহ এমন তিনটি পরিখা তৈরি করে দেবেন, যার একটি থেকে অপরটির দূরত্ব হবে পূর্ব ও পশ্চিমেরও বেশি।’
এছাড়া ইতিকাফে থাকার কারণে যেহেতু ইতিকাফকারী ব্যক্তি বাইরে বের হতে পারে না এজন্য তার বাইরে বের না হতে পারার কারণে যে সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হবে আল্লাহ ঐ ব্যক্তির সেই সওয়াব পূরণ করে দেবেন। বাইরের সওয়াব থেকে বঞ্চিত মানে হলো ইতিকাফের বাইরে যারা থাকবে তারা তো নানান ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজকর্ম যেমন কাউকে সাহায্য করা, রোগীর সেবা করা ইত্যাদি কাজ দ্বারা সওয়াব অর্জন করার সুযোগ পাবে। কিন্তু ইতিকাফকারী বাইরে বের হতে না পারায় সেই কাজগুলো করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তাকে এ থেকে নিরাশ করবেন না।
নবী সা. বলেছেন, ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে আর ইতিকাফে লিপ্ত থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজগুলোর পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে’।
ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, আল্লাহ্র আনুগত্যপূর্ণ কাজ তথা কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ ইত্যাদিতে মাশগুল থাকা। কেননা ইতিকাফের উদ্দেশ্যই হচ্ছে এটা। তবে সামান্য কথাবার্তায় কোন অসুবিধা নেই বিশেষ করে কথা যদি উপকারী হয়। রমজানে ইতিকাফের সময় ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যায়। ইতিকাফকারী পুরুষ ২০ রমজান আসরের নামাজের পর সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছাবেন। এখানেই খাওয়া দাওয়া করবেন এবং ঘুমাবেন। বিনা প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবেন না। তবে প্রস্রাব পায়খানা বা গোসল ইত্যাদি কাজে অথবা শরিয়তের প্রয়োজনে যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া জায়েজ। জুমার নামাজ বলতে যে মসজিদে ইতিকাফ করবেন সেই মসজিদ যদি জামে মসজিদ না হয়। জামে মসজিদ হলে তো আর জুমার জন্য বের হবার দরকার নেই।
মসজিদুল হারামে ইতিকাফ করলে তা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। তারপর মসজিদে নববীতে এবং তারপর বায়তুল মাকদেসে। তারপর উৎকৃষ্ট ইতিকাফ হয় কোনো জামে মসজিদে। তারপর মহল্লার মসজিদে যেখানে জামায়াতে নামাজ হয়। মসজিদ ছাড়া পুরুষের ইতিকাফ সহিহ হবে না। মহিলারা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে তিনি নামাজ আদায় করেন, সেখানেই ইতিকাফ করবেন। বাড়ির নির্দিষ্ট স্থান না থাকলে যেকোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে ইতিকাফ করবেন এবং ঈদের চাঁদ উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করবেন না।