আদানির ফাঁদে বিদ্যুৎ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০:১৭ অপরাহ্ন
শেখ হাসিনার শাসনামলে আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ চুক্তি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশ না পারছে অসম চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারছে শান্তিতে বর্তমান উচ্চহারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে যেতে। তা সত্বেও দেশের বিদ্যুতের গুরুত্ব বিবেচনায় বর্তমান সরকার এই উচ্চ হারের অন্যায় ও অসম বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্বেও বাংলাদেশকে বিব্রত করতে ও বিপাকে ফেলতে আদানি গ্রুপ প্রায়ই বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি করছে, হঠাৎ বন্ধ করে দিচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ নানা অজুহাতে।
গতকাল মিডিয়ায়, ‘আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, লোডশেডিং বাড়তে পারে’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কারিগরী ক্রটির কারণে ভারতের ঝড়খ- রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ৮শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু’টি ইউনিট আছে। প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ৮ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়েছে গত শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ঘাটতি মেটাতে গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানান, আমদানির কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪ শ’ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিলো। ৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
লক্ষণীয় যে, আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও পিডিবি’র চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। গত ২০২৪ সনের ১৪ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরে যার হাতে আদানির সঙ্গে অসম চুক্তি হয়’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ভারতের সাথে আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার দায় এসে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর। আদানি গ্রুপের সঙ্গে পিডিবি’র চুক্তি খতিয়ে দেখতে ৫ সেপ্টেম্বর ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য ও তার ওপর শুল্ক কর পরিশোধ করা হয়েছে কি-না এবং শুল্ককর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিলো কি-না এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কিমিটি বলা বাহুল্য, এসবই ছিলো চাপের মুখে করা লোক দেখানো সরকারী তৎপরতা। লক্ষণীয় যে, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চুক্তি সই করে। এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার ওই চুক্তি সইয়ে কঠোর গোপনীয়তা অনুসরণ করা হয়। চুক্তির খসড়ার ওপর মতামত দিতে সরকারের অন্য কোন দপ্তরে তা পাঠানো হয়নি। এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগে এলেও তা পিডিবিতে পাঠানো হয়নি। ২০২২ সালের শেষের দিকে আলোচনায় আসে আদানির চুক্তির বিষয়টি। নিয়ম অনুযায়ী, সরকার অন্য কোন দেশের সঙ্গে চুক্তি বা প্রটোকল স্বাক্ষরের আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মতামত নিয়ে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে এই চুক্তি করা সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরের মতামত ছাড়াই। চুক্তি স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি হিসেবে পিডিবি’র তৎকালীন চেয়ারম্যানও চুক্তির কপি দেখার সুযোগ পাননি। শুধু চোখ বন্ধ করে তাকে স্বাক্ষর করতে হয়। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী সচিব আহমেদ কায়কাউস। চুক্তিতে কী কী ধারা বা শর্ত রাখা হয়েছিলো, তা বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তাই জানতেন না বলে তাদের দাবি।
যা-ই হোক, আদানির সঙ্গে করা এই বিদ্যুৎ চুক্তিটি যে শেখ হাসিনার নির্দেশে তার বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সচিব করেছিলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সন্তুষ্ট করতে তারই ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী আদানির সাথে এই অসম, অন্যায় ও আর্থিক দিক দিয়ে চরম ক্ষতিকর এই চুক্তিটি করা হয়। যার খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এই দেশবিরোধী চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব স্থায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করতে বর্তমান সরকার। চেষ্টা করছে নবায়ন যোগ্য জ¦ালানির বিদ্যুৎ পেতে। এজন্য কিছু সময় প্রয়োজন। জনগণ অপেক্ষায় আছে বিদ্যুৎ খাতের সম্ভাবনাময় সেই দিনের।