‘সন্তুষ্ট নয়’ বিএনপি, খুশি বলছে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৪১:১১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। বৈঠকের পর এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে সরকার বলছে, প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বিএনপিকে খুশি মনে হয়েছে। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেছেন। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলটির ৭ সদস্যের এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন দেননি। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বর মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তাঁকে জানিয়েছি। যার মধ্যে প্রধান ছিল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। আমরা বলেছি যে বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি আছে এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে আমরা বিশ্বাস করি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একই সঙ্গে চলমান যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, তাতে আমরা সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছি। গত কয়েক দিন আগে সংস্কারে আমাদের যে মতামতগুলো তা আমরা দিয়েছি এবং আগামীকাল আমাদের সঙ্গে (ঐকমত্য কমিশনের) বৈঠক আছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, যে বিষয়গুলোতে সব দল ঐকমত্য হবে, আমরা সেগুলোর চার্টার (সনদ) করতে রাজি আছি এবং সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি। বাকি যে সংস্কার, সেগুলো আমদের যে রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেবে। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে বিএনপির প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে প্রধান উপদেষ্টা কিছু বলেননি। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। তবে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করবেন না, তা বলেননি। বিএনপি এতে সন্তুষ্ট হয়নি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। বিএনপি বলেছে, ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তাই ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার জমিরউদ্দীন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ।
বিএনপিকে খুশি মনে হয়েছে, আসিফ নজরুল :
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের পর তাদের আনন্দিত মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কোনোভাবেই আগামী বছরের জুনের পরে যাবে না। আমরা বিএনপিকে ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি, নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না। যে যা-ই কথা বলুক না কেন, এটা পুরো জাতির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার। বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন মানে, ইচ্ছা করে দেরি করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করা হবে, সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
ডিসেম্বরে সম্ভব হলে ডিসেম্বরে, জানুয়ারিতে সম্ভব হলে জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে বলে বিএনপিকে বৈঠকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। বৈঠকে সংস্কার দেরি হতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিএনপি। আসিফ নজরুল বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা স্পষ্ট করে বলেছেন, জুলাই চার্টার (সনদ) প্রস্তুত হয়ে গেলেও আইনগত বিষয় আছে, নীতিগত বিষয় আছে, সেগুলো গ্রহণ করতে সময় লাগে।
বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব বিষয়ে দলটি অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা বলেছে, দু-তিন দিনের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তারা বসছে। অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে তারা ঐকমত্য পোষণ করে।
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভিন্নমত আছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ওনারা (বিএনপি) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করলে ভালো হয়। আমরা এখানে বলেছি, আমাদের কারও কারও কথার মধ্যে যদি অস্পষ্টতা থাকে, আমাদের মধ্যে কোনো কোনো উপদেষ্টা অন্যরকম কথা বলেন, যে যেটাই বলুক না কেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যেটা বারবার বলেছেন, সেটাই দলের (সরকারের) অবস্থান। সেখান থেকে অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা বা নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন, সেটাতে তাঁরা যেন বিভ্রান্ত না হন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম থেকেই বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের কথা।