১৫ বছর পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণের’ যাত্রা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩০:৪৪ অপরাহ্ন
৪.৩২ বিলিয়ন ডলার পাওনা চাইল বাংলাদেশ | আর ‘বাস মিস’ নয়, সম্ভাবনায় জোর পাকিস্তানের
জালালাবাদ রিপোর্ট : হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘জট খোলা’ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে ১৫ বছর পর বৈঠক করলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। বৈঠকে একাত্তরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে দেশটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত তিনটি বিষয়ের সুরাহা চেয়েছে ঢাকা। পাকিস্তানের কাছে পাওনা ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারও ফেরত চাওয়া হয়েছে। আর পাকিস্তান এ বিষয়গুলো সুরাহার জন্য আলোচনার সদিচ্ছা ব্যক্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় বৈঠক করেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা। ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ বা ‘এফওসি’ শীর্ষক এ বৈঠকে স্ব স্ব পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। বৈঠকটি যেন হয়ে উঠে দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণের’ আনুষ্ঠানিক যাত্রা। যাতে গুরুত্ব পায় ৭১ এর অমীমাংসিত বিষয়, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সরাসরি ফ্লাইট চালু, উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের বিষয়ে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ অমীমাংসিত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা সহায়তা ফেরত এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।
আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বললে পাকিস্তান কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, এ বিষয়ে তারা (পাকিস্তান). আলোচনা অব্যাহত রাখবে। এদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা জানান।
মূলত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি মাসের শেষে ঢাকা সফর করার কথা। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করতেই দেশটির সচিব ঢাকা সফরে এসেছেন।২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে সর্বশেষ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। এরপর ১৫ বছর এই বৈঠক আর হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো।
সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব প্রধান উপদেষ্টার : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন আমনা বালুচ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব কাটিয়ে ওঠার উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
এ সময় অতীতের বিষয়গুলো স্বীকার করে আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বালুচ আরও বলেন, আমাদের নিজেদের আয়ত্তে বিশাল আন্তঃবাজার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের এটি ব্যবহার করা উচিত। আমরা প্রতিবার ‘বাস মিস’ করতে পারি না। দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে নিয়মিত পারস্পারিক যোগাযোগ এবং সব পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে সফর আয়োজনের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আশা প্রকাশ করেন, এপ্রিলের শেষ দিকে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সার্কের কাঠামোয় পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তিনি সবসময়ই পছন্দ করেন। তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে বন্ধন বাড়াতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উচিত দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি যুব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনিময় করা। আমাদের সম্পর্ক হিমশীতল হয়ে যাওয়ায় আমরা দীর্ঘদিন একে অপরকে মিস করছিলাম। আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করতে হবে।