ঐকমত্য কমিশনের সাথে তৃতীয় দিনের বৈঠক : কীসে একমত, দ্বিমত কীসে জানালো বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯:২১:৪০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘বৃহত্তর সমঝোতা’ হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিএনপি। কীসে একমত, দ্বিমত কীসে-ঐকমত্য কমিশনের সাথে তৃতীয় দিনের বৈঠকে তাও পরিস্কার করেছে দলটি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বেলা ১১টার পর এই আলোচনা শুরু হয়। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে নতুন প্রস্তাব হিসেবে এসেছে কেউ তিনবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর, বিরতি দিয়ে তৃতীয় এবং শেষবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে নতুন এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল, কেউ জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
তবে বিএনপি বলছে, টানা দু’বারের বেশি না পারলেও বিরতি দিয়ে যতবার খুশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। এ সুযোগ সংকুচিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
জ্যেষ্ঠতম ৩ জনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের মত :
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ তিন বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রাখার বিষয়ে মত দিয়েছে বিএনপি।
রাষ্ট্রপতির অভিশংসনপ্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের বিষয়ে বিএনপি একমত পোষণ করেছে। ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়েও একমত হয়েছে বিএনপি। তবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ তিন বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা করা যেতে পারে বলে তারা মতামত দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তিনটি পদে না থাকার প্রস্তাবের বিপক্ষে :
বিএনপি জানিয়েছে, একজন ব্যক্তি যাতে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা পদে না থাকেন, এ নিয়ে আলাপ হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী হন। এটা জরুরী নয়, দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু সুযোগ রাখা উচিত। আর প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, তিনিই সংসদ নেতা হবেন। এটাই রীতি। কোনো কোনো দেশে পৃথক সংসদ নেতার নজির রয়েছে। কিন্তু সেখানে সংসদ নেতার নির্বাহী ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশে সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী অনেকটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কয়েকটি প্রস্তাবের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ১৪ জন হবেন, এতে বিএনপি একমত। উপদেষ্টামণ্ডলীর রুটিন দায়িত্ব পালন করবে, এতে বিএনপি একমত। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য থেকে একজনকে মনোনীত করা হবে, এ সুপারিশেও একমত। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একমত। স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করা হবে না, এই ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ একমত।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের সুপারিশেও বিএনপি মোটামুটি একমত। তবে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। কারণ শৃঙ্খলা বাহিনী বলতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন বিভাগসহ পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। সুতরাং ঢালাওভাবে শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে একটি বিধান রাখলে, বিশৃঙ্খলা হয়ে যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা :
দ্বিকক্ষের আইনসভা গঠনে বিএনপি একমত। উচ্চ কক্ষের নাম সিনেট, নিম্ন কক্ষের নাম জাতীয় সংসদ হবে। নিম্ন কক্ষের ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, এটা নিয়ে আমরা একমত। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত আছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছি। রাষ্ট্রপতির কাছে কী কী ক্ষমতা অর্পণ করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতি কী কী করতে পারবেন, তা বিস্তারিত থাকবে। তবে এই মুহূর্তে বিস্তারিত উন্মোচন করছি না।
গণভোটের বিপক্ষে বিএনপি :
বিএনপি বলছে, গণভোট সব বিষয়ে হবে না। সংবিধান সংশোধনের কিছু আর্টিক্যাল থাকে মানে প্রিয়াম্বল প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে আর্টিক্যাল ৮, ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ যাতে সংবিধান সংশোধনীর বিভিন্ন উপায় বলা আছে। এগুলো পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ সরকার গণভোট বাতিল করে দিয়েছিল। পরে কোর্টে রায়ের মাধ্যমে ১৫তম সংশোধনী যেটাকে চ্যালেঞ্জ হয়েছে। গণভোটকে রি-ইস্টিড করা হয়েছে। সেই বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে গণভোট হওয়া উচিত না।
আলোচনায় বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপারসন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৈঠকে ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রাথমিক আলোচনায় নতুন প্রস্তাব আসছে যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর সাথে তারা আবার আলোচনা করবেন। এরপর মে মাসের মাঝামাঝি দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।