ব্যাংক খাত তথা অর্থনীতিতে সংকট কাটছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৫, ১২:৩২:১৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় মিডিয়ায়। ‘তিন মাসে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক এই সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের ব্যাংক খাতে ডিপোজিট বা আমানত বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এতে মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত স্বৈরশাসনামলে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনগণের আস্থা কমে গিয়েছিলো। এ সময় কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দেয় এবং কিছু ব্যাংক আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। সরকার ও ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারির বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বেশী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করায় সুদ হার বেড়ে যায়, যার ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে।
ব্যাংকে তারল্য সংকটের জন্য অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অর্থাৎ দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ প্রদান ও খেলাপী ঋণ আদায় না করা অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দেয়। এস আলম গ্রুপ ও সালমান এফ রহমানসহ সরকারের অলিগার্করা দুর্নীতিমূলক পন্থায় লাখো কোটি টাকা ঋণ নেয় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে। অপরদিকে খেলাপী ঋণ আদায় না করে এসব সরকার ঘনিষ্ঠ মাফিয়া লুটেরাদের নতুন করে ঋণ দেয়া হয়। এসব খবর মিডিয়ায় এলে জনগণের মাঝে ব্যাংক খাত নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। এই সন্দেহে ঘৃতাহুতি দেয় দেউলিয়াবস্থায় চলে যাওয়া কিছু ব্যাংক যখন আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও গ্রাহকদের মাঝে দেন দরবার ও বাক বিতন্ডা সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুর্নীতিবাজ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ব্যাংক লুটেরাদের অবাধ লুটপাটের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বিপ্লবোত্তর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য এবং সৎ অর্থনীতিবিদদের হাতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব প্রদান করে। ক্ষমতা গ্রহণের পর তারা একাধিক ব্যাংকের রাজনৈতিক বিবেচনায় ঘটিত দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে এগুলোর পুনর্গঠন করেন। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তনের পর নতুন ব্যবস্থাপনা আমানত সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা সুদহার বাড়িয়ে নতুন আমানত আকর্ষণ করে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক আমানত প্রবৃদ্ধি তথা ব্যাংক ব্যবস্থাপনায়।
সর্বোপরি গত কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় ব্যাংক খাতে অনেকটাই শৃংখলা ফিরে এসেছে। তবে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে এক্ষেত্রে। ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত ৬ মে মিডিয়ায় প্রকাশিত ‘শৃংখলা ফিরছে ব্যাংক খাতে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক খাতে লুটপাট হয়েছে। ঋণের নামে হয়েছে ব্যাংকের টাকার ভাগাভাগি। অর্থ পাচারের রেকর্ড হয়েছে। কারও মুখ খোলার মতো অবস্থা ছিলো না। গত আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে সব কিছু। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংক খাত সংস্কারে মনোযোগ দেয়। এতে গত ৬ মাসে কিছুটা শৃংখলা ফিরছে ব্যাংক খাতে।
বলা বাহুল্য, উপরোক্ত সংবাদটি গত ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকের। এরপর আরো ৪/৫ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। ব্যাংক খাতে তথা দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কমেছে মূল্যস্ফীতি। এতে জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি। ব্যাংকে অর্থ তুলতে গিয়ে গ্রাহক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাঝে টানাপোড়েনের সংবাদও এখন আর প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে না মিডিয়ায়। তবে অর্থনীতিতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ বয়ে গেছে। শেয়ার মার্কেট এখনো অস্থির। বেকারত্ব প্রকট। দেশী বিদেশী বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটেনি। আশা করা যায়, সরকার এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতার পরিচয় দেবে। ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান এসব সংকট ও সমস্যা, এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।