বিচারের অপেক্ষা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩:৩৩:৪১ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল:
এক বছর পর ফিরেছে জুলাই, আজ ফিরেছে সেই ভয়াল ১৯ তারিখ। কেবল ফিরেনি তুরাব। আর ফিরবেনা কোনোদিন। শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের শাহাদাতের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। এই ১ বছরে দেশে অনেক কিছুই হলো। কেবল শেষ হয়নি তুরাব হত্যার বিচার। এক বছরে অর্জন কেবল ২ জন আসামী গ্রেফতার আর তদন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম এলাকা কোর্টপয়েন্টে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের গুলীতে নিহত হন দৈনিক জালালাবাদের সিনিয়র রিপোর্টার ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আবু তাহের মো. তুরাব (এটিএম তুরাব)। এরপর কেটে গেছে এক বছর। এই সময়ে এসএমপির কোতোয়ালী থানা, পিবিআই হয়ে মামলাটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-আইসিটিতে। অপেক্ষা বাড়ছে বিচারের। মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান শহীদ তুরাবের মা, স্বামী হত্যার বিচার দেখতে চান বিয়ের ২ মাসের মাথায় প্রিয়জনকে হারানো স্ত্রী ও তুরাবের ভাই-বোনেরা।
মাত্র দুই মাস আগে লন্ডনি কইন্যা বিয়ে করেছিলেন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। লন্ডন যাওয়ার সব প্রক্রিয়া এগিয়েও রেখেছিলেন। হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে তার লন্ডন পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয় তাকে। এমন ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে তার পরিবার। লন্ডনে থাকা সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তানিয়া ইসলাম বিয়ের ২ মাসের মাথায় হয়ে যান বিধবা। এখনো কাঁদছেন তিনি। কারণ তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় স্বামীর মরদেহ ও শেষ বিদায়ের দৃশ্য দেখতে পারেননি তিনি। সাংবাদিক তুরাব হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে তুরাব হত্যা মামলায় এসএমপির তৎকালীন এডিসি সাদেক কাউসার দস্তগীর ও পুলিশ কনস্টেবল উজ্জল সিংহ কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু এসএমপির তৎকালীন ডিসি আজবাহার আলীসহ এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামী এখনো বাইরে থাকায় ন্যায়বিচার নিয়ে পরিবার ও সহকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তাগণ। তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে বলেও জানান তারা। এছাড়া আগামীকাল ২০ জুলাই প্রথমবারের মতো তুরাব হত্যা মামলার দুই আসামীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। চাওয়া হবে রিমান্ড। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে চার্জশীট দাখিল করা সম্ভব বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম দৈনিক জালালাবাদকে জানান, এই মামলার তদন্ত কাজ একটু জটিল। কারণ প্রতিটি আসামীর ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি সম্পদের হিসেবও নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি আসামীর পেশাগত কাজ জুলাই আগস্টে তাদের কার্যক্রম তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে এইটুকু বলা যায়, সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আগামীকাল ২০ জুলাই মামলাটির ধার্য তারিখ রয়েছে। ঐদিন আদালতে গ্রেফতারকৃত পুলিশ কর্মকর্তা সাদেক কাউসার দস্তগীর ও উজ্জল সিনহাকে হাজির করা হবে। সেদিন আমরা তাদের রিমান্ডের আবেদন করবো। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হবে।
মামলার বাদী সাংবাদিক তুরাবের বড়ো ভাই আবুল আহছান মোহাম্মদ আজরফ (জাবুর) হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ভাইয়ের স্থান কিছুতে পূরণ হয়না। সরকার ও প্রশাসন আমাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমরা হতাশ। এসএমপি থেকে পিবিআই, সেখান থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন তদন্তাধীন। এক বছরেও অগ্রগতি কেবল তদন্ত। প্রকাশ্য দিবলোকে একজন পেশাদার সাংবাদিককে গুলী করে হত্যার মামলার বিচার নিয়ে এত ধীরগতিতে হতাশ হবারই কথা।
মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান শহীদ তুরাবের মা। তিনি বলেন, তুরাব ছিল আমার নাড়ী ছেঁড়া ধন। এক বছরে এক মুহূর্তের জন্যও আমি তুরাবকে ভুলতে পারিনি। ছেলের হত্যাকারীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে আমার তুরাবের আত্মা শান্তি পাবে।