তিনটি ভাগে জুলাই সনদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২:৩১:৫৪ অপরাহ্ন
*দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত অনুলিপি *শুক্রবার স্বাক্ষর অনুষ্ঠান * ৩০টি দলকে আমন্ত্রণ*
জালালাবাদ রিপোর্ট : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি। তবে এতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সুপারিশ থাকছে না।
জুলাই জাতীয় সনদের তিনটি ভাগ আছে। প্রথম ভাগে আছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৭ দফা অঙ্গীকারনামা।
কমিশন জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পরে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলগুলোর কাছে আলাদাভাবে দেওয়া হবে। আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন।
এরই মধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এই আয়োজনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সহায়তা করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে সইয়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তবে সব দল শেষ পর্যন্ত সই করবে কি না-তা এখনো নিশ্চিত নয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন) সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।
গত ফেব্রæয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।
কমিশন সূত্র জানায়, সনদের বিষয়ে আর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে না। এর আগে (গত ১১ সেপ্টেম্বর) যে খসড়া পাঠানো হয়েছিল, মূলত সেটি চূড়ান্ত আকারে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে মূল বিষয়বস্তুর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, কিছু ভাষাগত সংশোধন থাকছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শনসংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক বিলুপ্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। প্রায় সব কটি দল এর পক্ষে মত দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত সনদে এটি নতুন করে উল্লেখ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
গত জুলাই মাসে জুলাই জাতীয় সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এত দিন সনদ আটকে ছিল। তবে কমিশন আগেই জানিয়েছিল, বাস্তবায়নের পদ্ধতি সনদের অংশ হবে না। যদিও এখন পর্যন্ত এই সুপারিশ চূড়ান্ত হয়নি।
গত ৩১ জুলাই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতভিন্নতা আছে।
৯ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশন জানিয়েছিল, বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে। এরপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতপার্থক্য কমাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোট কি সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে নাকি আগে, গণভোটে কী কী প্রশ্ন থাকবে-এসব বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা এখনো কাটেনি। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ আগামী শুক্রবারের মধ্যে চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না, সেটা নিয়ে আলোচনা আছে।