রমজানে পণ্যে পূণ্যলাভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:৩০:১৯ অপরাহ্ন
পবিত্র রমজান মাস আসতে আর মাত্র দিন তিনেক বাকী। প্রায় প্রতি বছরই রমজান মাসকে সামনে রেখে সংযুক্ত আরব আমিরাত জুড়ে হাইপার মার্কেট ও সুপার মার্কেটগুলোতে ব্যাপক ঘোষণা আসে মূল্যহ্রাস বা ছাড়ের। এবার রমজানেও ব্যতিক্রম নয়। এবারও মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে ১০ হাজারেরও বেশী খাদ্য পণ্যে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অনেকের মতে, বিশ্বের অন্যতম দেশ আরব আমিরাতের মাথাপিছু আয় যথেষ্ট এবং প্রায় সকল বাসিন্দাই ভালো আয় উপার্জন করেন। তাই রমজানে তাদের খাদ্য পণ্যের দাম না কমালেও সে দেশের জনগণের তেমন সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু সে দেশের ব্যবসায়ীরা ধর্মীয় ও মানবিক দৃষ্টিকোণ পূণ্যের আশায় দ্রব্যমূল্যে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অপরদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে। এদেশের কয়েক কোটি মানুষ হতদরিদ্র, অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটায়। আর এদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত বিত্তশালী। তাদের উপার্জন বিপুল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশের দরিদ্র মানুষের কথা ভেবে তাদেরকে কখনো খাদ্যপণ্যে ছাড় দিতে দেখা যায় না, এমনকি রমজান মাসেও না। বরং পূণ্যের মাস রমজানকে পুঁজি করে তাদের অনেককে বাড়তি মুনাফা লাভে সচেষ্ট হতে দেখা যায়। এতে দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের আর্থিক কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়ে। কিন্তু এতে তাদের মাঝে কোন অনুশোচনা বোধ জাগতে দেখা যায় না।
জানা গেছে, এবার রমজান মাসে আরব আমিরাতের ক্রেতারা মুদি সামগ্রী, খাদ্য, তাজা পণ্য, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেক্ট্রনিক্স এবং গৃহসজ্জার সামগ্রীর মতো বিভিন্ন বিভাগে নির্বাচিত পণ্যগুলোতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবে। ক্রেতারা দুবাই ভিত্তিক ইউনিয়ন কূপ রিটেইলারের কাছ থেকে ১০ হাজারটির বেশী মৌলিক খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবহার্য পণ্য ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে ক্রয় করতে পারবে। লুলু নামক প্রতিষ্ঠান ২শ’র বেশী পণ্যকে ছাড়কৃত একই দামে বিক্রি করার জন্য ঘোষণা দিয়েছে।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে বহু নামীদামী বড় বড় কোম্পানী চাল ডাল তেল শুরু করে ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ব্যবসা করছে। তারা সরকারের প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় যখন তখন মূল্য বৃদ্ধি করছে এমনকি সিন্ডিকেটিং বা কার্টেল করে বিভিন্ন পণ্য থেকে অস্বাভাবিক মূল্য আদায় করছে। কিন্তু তাদেরকে কখনো পণ্যমূল্যে ছাড় দিতে দেখা যায় না। রমজানের মতো পবিত্র মাসেও তারা বাড়তি মুনাফা লোটার মতো অমানবিক ও জঘন্য কাজ করতে পিছপা হয় না, সুযোগ ছাড়ে না।
রমজান আসার আগেই এবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে রমজানে বাড়তি চাহিদাযুক্ত পণ্যের বাজার। কিছুদিন ধরে বাড়তে থাকা মাছ মাংসের পর এখন বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। কয়েকদিন আগে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেয় সরকার। কিন্তু এরপর বেশ কদিন পেরিয়ে গেলেও খুচরো বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। এর পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা। অন্যান্য অনেক পণ্যেও একই অবস্থা। এভাবে বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে যখন পূণ্যের মাস রমজানে পণ্যের দামে ছাড় দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা, তখন ৯০ ভাগেরও বেশী মুসলমানদের দেশে ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করে পূণ্যের পরিবর্তে গোনাহের কাজ করছেন।
দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসব পার্বন এলেই দ্রব্যমূল্য হ্রাস করার আন্তরিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। অথবা ২৫% থেকে ৩০% ডিসকাউন্ট। কোন কোন ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। আর আমাদের দেশে উৎসব পার্বন এলেই দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
এদিকে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুত ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার সরবরাহ মজুত ও বাজার স্থিতিশীল রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবার রমজানে পণ্যের সংকট হবে না, মূল্যও বৃদ্ধি পাবে না। ভোক্তারা যদি একসঙ্গে বেশী পণ্য না কেনেন, তাহলে বাজারে পণ্যের উপর বেশী চাপ পড়বে না।
বলা বাহুল্য, গত কয়েক মাসে মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের অসংগতি আগের চেয়ে অনেক বেশী বেড়েছে। এ অবস্থায় কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে প্রধান নিত্যপণ্য বিক্রয় বৃদ্ধি এবং সম্ভব হলে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান এখন সময়ের দাবি। পবিত্র রমজানে এটাই সবচেয়ে মানবিক ও পূণ্যের কাজ। অন্যথায় স্বল্প আয়ের ও হতদরিদ্র শ্রেণীর মানুষের পক্ষে জীবনধারণ প্রকৃত অর্থেই অসম্ভব হয়ে পড়বে, যা অমানবিক, পাপ ও অকল্যাণের পথ।