সুখের অসুখ বাংলাদেশে
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৫:৪৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-২০২৩’ (অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকা ২০২৩) এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ টি দেশের মধ্যে ১১৮। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৯৪। মাত্র একটি বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নেমে গেছে ২৪ ধাপ নীচে। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। লক্ষণীয় যে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় টানা ৬ বছরের মতো নীচে অবস্থান করছে ফিনল্যা-। এছাড়া এই তালিকায় শীর্ষ ১০ এ রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যা-, সুইডেন ও নরওয়ে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর, যার অবস্থান ২৫ নম্বরে। এছাড়াও এই তালিকায় আছে আরব আমিরাত (২৬), তাইওয়ান (২৭), সৌদী আরব (৩০), বাহরাইন (৪২), জাপান (৪৭), মালয়েশিয়া (৫৫), থাইল্যা- (৬০), মালদ্বীপ (৬৩), চীন (৬৪), ফিলিপাইন (৭৬), নেপাল (৭৮), পাকিস্তান (১০৮), ভারত (১২৬), মিয়ানমার (১১৭) ও শ্রীলংকা (১১২)। তালিকায় সবচেয়ে নীচে আছে আফগানিস্তান। এর এক ধাপ ওপরে আছে লেবানন (১৩৬)। এই প্রতিবেদনে সবচেয়ে সুখী দেশ নির্ধারণের জন্য ৬টি সূচক যাচাই করা হয়। এই সূচকগুলো হচ্ছে-মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সহায়তা, সুস্থ জীবনযাপনের প্রত্যাশা, জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মানুষের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও দুর্নীতির মাত্রা।
লক্ষণীয় যে, বিশ্বের সুখী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নেপাল ও থাইল্যা-ের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ তো বটে এমনকি ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও শ্রীলংকার চেয়েও নীচে। শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও যুদ্ধপীড়িত মিয়ানমারের চেয়ে কিছু ভালো অবস্থানে রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। অথচ বিগত বছরগুলোতে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর ও কানাডার মতো দেশের অবস্থানে চলে এসেছে। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে কিংবা উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। কিন্তু এতো সব বাগাড়ম্বরের মধ্যে হঠাৎ করেই দেশটির এমন শোচনীয় অবস্থার চিত্র যখন প্রকাশিত হয়েছে, তখন যে কোন মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও বিস্ময় সৃষ্টি হতে পারে। র্যাংকিংয়ের বিষয়টি করা হয় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।
গত সোমবার ২০ মার্চ ছিলো আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। জাতিসংঘের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০১২ সালের ১২ জুলাই এই দিনকে সুখ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি বছর ২০ মার্চ সুখ দিবসের প্রাক্কালে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করে জাতিসংঘ। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রকাশ করা হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-২০২৩’।
দেখা গেছে, সুখী দেশের এই তালিকা তৈরীর ক্ষেত্রে একটি দেশের জিডিপি’র বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ তো চীন, ভারত ও পাকিস্তানসহ অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে ওপরে, এমনকি অনেক ধনী দেশেরও ওপরে। কিন্তু সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের এই বিষয়টি কি কোন প্রভাব রাখেনি, র্যাংকিং দেখে যে কারোর মনে এমন প্রশ্ন জাগতে পারে। আর এক বছরে বাংলাদেশ সুখী দেশের তালিকায় ২৪ ধাপ নীচে নামার বিষয়টি রীতিমতো বিস্ময়কর। অবশ্য গত ক’মাসে কিংবা এক বছরে জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ বৃদ্ধিতে দেশের সিংহভাগ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট যে কতোটা তীব্র হয়েছে, তার কিছুটা প্রতিফলন ঘটেছে এই সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের মধ্যে।
চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও পক্ষপাতিত্ব এসব শব্দ পরিহার করে আমাদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে এই র্যাংকিংয়ের মূল্যায়ন করা উচিত। আমাদের হঠাৎ এই অধঃপতনের পেছনে কী কারণ লুক্কায়িত তা নির্ণয় করা জরুরী। অহেতুক বাগাড়ম্বর করে সাময়িকভাবে কিছু মানুষের আই ওয়াশ করা গেলেও চিরদিন সকল মানুষকে এভাবে ধোঁকা বা ধাপ্পা দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের দুর্বলতা সনাক্ত করে তা দূর করার প্রচেষ্টাই হোক এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়, এমন প্রত্যাশা ও দাবি সচেতন মহলের।