রমজানের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন
শুরু হলো পবিত্র মাহে রামাদ্বান। এই পবিত্র মাস বিশ্বের মুসলমানদের জন্য সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী মাস। এ মাসে তাই দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসে, শানিত ও উজ্জ্বল হয় জীবনের সকল ইতিবাচক কর্মকান্ড। কাজকর্মে আসে গতি, ইবাদতে আসে ঔজ্জল্য ও নিষ্ঠা। বাড়ে সংযম ও ধৈর্য্য।
রমজান মাসে যেহেতু বিভিন্ন অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজকর্ম একটু আগে ভাগে শুরু হয় এবং ইফতারের আগেই বাড়িঘরে ফেরার তাড়া থাকে, তাই এ সময়ে রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়ে। এই ভিড় সামাল দিতে হলে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। গত ক’দিন ধরে সিলেট নগরীসহ দেশের সকল নগরী ও শহরে যানজট বেড়েছে। গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘নগরজুড়ে যানজট, ভোগান্তি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অন্য বছরের মতো এবারও রমজান শুরু হওয়ার আগেই তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী। সাধারণত: রমজান মাসে নগরীর সড়কগুলোতে মানুষের ব্যস্ততার কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কিন্তু এবার আগেভাগেই যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের। এদিকে আসন্ন মাহে রমজানকে সামনে রেখে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেও তা তেমন একটা কাজে আসেনি। এ অবস্থায় যানজট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবহন মালিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, রিক্সা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। আর মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বন্ধ রাখার দায়িত্ব নগর পুলিশের। অন্যদিকে নগরীর কয়েকটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস না থাকায় অনেকেই পরিবহন সংকটে পড়ছেন। ট্রাফিক বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে, বেশ কয়েকটি কারণে নগরীতে হঠাৎ করেই যানজট বেড়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন কেনাকাটা করতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে অসংখ্য মানুষ নগরীতে আসছেন, অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট ও অধিকাংশ সড়কে সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া নগরীর অধিকাংশ মার্কেট ও হাসপাতালে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, অবৈধ পার্কিং। নগরীর বিভিন্ন মার্কেট, বিপনী বিতান ও রাস্তার পাশে এবং ফুটপাতে বিশেষভাবে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক যানবাহনের পাশাপাশি ভ্যানগাড়ি রিকশা সাইকেল ইত্যাদি রাখার কারণে রাস্তা ও চলাচল সংকুচিত হয়ে যানজট সৃষ্টি করছে। ফুটপাত ও রাস্তার পাশে হকারের পশরা, ভ্যানগাড়ি ও দোকানীদের পণ্য সামগ্রী রাখাও এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। ঈদের চাপ বৃদ্ধির আগে রমজানের শুরুতেই এসব সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক বিভাগ ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেকের মতে, অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে পারলে নগরীতে যানজট অর্ধেক কমে যাবে। আমরাও তাই মনে করি।
রমজানে রাস্তার পাশে, ফুটপাতে এবং বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁর সামনে ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয় প্রতিবছর। এবারও তাই হচ্ছে। বর্তমানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরীতে ধুলোবালি ও আবর্জনার পরিমাণ অনেক বেশী, বায়ু অনেক বেশী দূষিত ও ধুলোবালি রোগজীবানুপূর্ণ। তাই ইফতার সামগ্রী যাতে উন্মুক্ত ও অস্বাস্থ্যকরভাবে বিক্রি না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের মনোযোগ ও দৃষ্টি দিতে হবে। অস্বাস্থ্য ও নি¤œমানের খাবার খেয়ে সিয়াম পালনকারীরা যাতে অসুস্থ না হন, সেদিকে দৃষ্টি রাখা সকলের কর্তব্য।
রমজান মাস যেহেতু শুরু হয়ে গেছে, তাই এখন থেকেই ঈদের প্রস্তুতিও শুরু করবেন অনেকে। বিশেষভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের গোটা বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এটা চলবে ঈদের পূর্ব পর্যন্ত। এ সময় গোটা নগরী জুড়ে ভিড়, ব্যস্ততা বাড়বে। এ সময় নগরীতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি যাতে ঠিকঠাক থাকে সেদিকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের এখনি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। রমজান ও ঈদের শপিং উপলক্ষে নগরীতে লোকসমাগম বাড়লে অনেক অপরাধীরাও সুযোগ নিতে চাইবে। তাই নগরীতে ছিনতাইকারী, প্রতারক ও পকেটমারদের অপরাধ অপকর্ম প্রতিরোধে নিতে হবে সতর্কতামূলক আইনী ব্যবস্থা। রমজানের শুরুতে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। আমরা এদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।