ইফতারী পণ্যে ভেজাল প্রসঙ্গ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন
পবিত্র রমজানে বিভিন্ন জুস ও শরবতের পাউডার বিক্রির হিড়িক পড়তে দেখা যায়। কারণ সারাদিন সিয়াম পালন করে অর্থাৎ রোজা রেখে অনেকেই ঠান্ডা শরবত ও ফলের জুস বা রস পান করতে পছন্দ করেন। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকায় এমন কিছু ফলের জুস তৈরীর কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বিশেষভাবে বিভিন্ন ফ্লেভার ও কাপড়ে ব্যবহারের রং মিশিয়ে জুস ও শরবতের পাউডার তৈরী করা হচ্ছে। সারা দেশজুড়ে এগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে এমনি একটি কারখানার কথা সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব জুস তৈরীতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও রং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগ ব্যাধি হতে পারে। তাদের মতে, বর্তমানে দেশজুড়ে ক্যান্সারের এতো বিস্তারের পেছনে এ ধরনের ভেজাল পানীয় ও খাবার বিশেষভাবে দায়ী। বর্তমানে শুধু জুসই নয়, অধিকাংশ খাদ্য সামগ্রীতে ভেজাল রয়েছে বলে অনেকের অভিমত। প্রকৃতপক্ষে এখন এদেশে এমন খাদ্যপণ্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল যাতে ভেজাল নেই বা নিম্নমানের নয়।
পবিত্র রমজানে একটি জনপ্রিয় ইফতার সামগ্রী হচ্ছে খেজুর। এটা শুধু ফল নয়, রোজাদাররা খেজুরকে একটি অপরিহার্য ইফতার সামগ্রী বা খাবার হিসেবে মনে করেন। কিন্তু এই খেজুরের মধ্যেও মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন পঁচন বা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষার্থে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোপূর্বে ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এমনটি দেখা গেছে। শুধু খেজুর নয়, আঙ্গুর ও আপেলসহ অন্যান্য বিদেশী ফলেও এমনটি দেখা গেছে। রমজানে পোলাও আখনি ও বিরিয়ানী তৈরীতে অনেকেই ঘি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন ব্রান্ডের যেসব ঘি পাওয়া যাচ্ছে, এগুলোর কোনটিতেই একশ এমনকি নব্বই শতাংশ ঘি নয়, এমন অভিমত সচেতন মহলের। অনেক ব্যবসায়ীও এ বিষয়টি স্বীকার করেন। ঘি তৈরীতে আগে বেশী পাকা বা পঁচানো কলা ও সুগন্ধী ব্যবহৃত হতো। এখন বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও ফ্লেভার ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। অথচ সারা রমজান মাস জুড়ে ও ঈদে এ ধরনের ঘি’র লাখ লাখ কৌটা বা কনটেইনার বিক্রি হবে। অনেক বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর এমনকি সুপার স্টোরেও এ ধরনের ঘি পাওয়া যাচ্ছে।
রমজানে বেশী ব্যবহৃত হয় এমন পণ্য ছাড়াও সবসময় বিক্রি হয় এমন অগণিত পণ্যে ভেজাল হচ্ছে। সকালে নাস্তার সময় খাওয়া হয় যে ব্রেড বা পাউরুটি, এতেও কেমিক্যাল পাউডার ব্যবহার করা হয়, এগুলো তুলতুলে নমনীয় স্পঞ্জের মতো হওয়ার জন্য। শুধু কেমিক্যাল পাউডার নয়, এর ওপরিভাগে এক ধরনের কেমিক্যাল বা রং স্প্রে করা হয়, ব্রেডের উপরিভাগকে গাঢ় খয়েরি করার জন্য। সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় একটি ব্রেড কোম্পানীতে এভাবে রং করার একটি চিত্র প্রচারিত হয়েছে।
ধীরে ধীরে গ্রীষ্মকাল আসছে। গ্রীষ্মকালকে মধুমাসের ঋতু বলা হয়। এ সময়ে আম জামসহ নানা ধরনের ফলমুল প্রচুর বাজারে আসে। কিন্তু এসব ফল বিশেষভাবে ফলের রাজা আমে কেমিক্যাল মেশানোর হিড়িক পড়ে। মৌসুমের শুরুতে কৃত্রিম উপায়ে অপরিপক্ক ও কাঁচা আম পাকানোর জন্য ব্যবহৃত হয় কারবাইডসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল, পরে সেগুলো পঁচন থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় ফরমালিন জাতীয় প্রিজারভেটিভ। এসবই মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অবশ্য গত দু’তিন বছর যাবৎ আমে এ ধরনের ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার অনেক হ্রাস পেয়েছে। জনগণ সচেতন হয়ে ওঠায় এবং আমসহ বিভিন্ন ফলমূল খাওয়া কমিয়ে দেওয়ায় আমের ব্যবসায় ধস নামে। এতে আম ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েন। এরপর থেকে আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর প্রবণতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। আমরা আশা করবো, অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা এমনিভাবে ভেজাল মেশানো থেকে নিবৃত্ত হবেন। এর পাশাপাশি বিএসটিআইসহ খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা বিধানকারী সংস্থাসমূহ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এদিকে দৃষ্টি ও মনোযোগ দেবেন।