বিশ্ববাজারে স্বস্তি, বাংলাদেশে দীর্ঘশ্বাস
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:৪৮ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্থিতিশীলতা ফিরছে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারে। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের অভিঘাতে গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। জ্বালানী, খাদ্যশস্য, শিল্প, কাঁচামাল ও সারের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়ে যায় উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। বর্তমানে এর বিপরীত প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বাজারে। বৈশ্বিক পণ্য বাজারে প্রায় সব পণ্যেরই দাম এখন পড়তির দিকে।
পণ্যবাজারের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পিংকশীট অর্থাৎ নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের মার্চ সংস্করণেও দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকটি বাদে অধিকাংশ পণ্যেরই দাম এখন কমতির দিকে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারী-মার্চ) তুলনায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে এসব পণ্যের দাম কমেছে ১০ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। লক্ষণীয় যে, বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক কমলেও বাংলাদেশের বাজারে এর তেমন কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ও দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও এখানকার পাইকারী বাজারে ভোজ্য চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম এখনো কমেনি। বরং কোন কোনটির দাম উর্ধমুখী। রমজানে সব ধরনের খাদ্যশস্যের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্যের দাম না বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হলেও বাজারে এখন পর্যন্ত তা কমতে দেখা যাচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বিরতিতে প্রতি মাসে ভোজ্য তেলের দাম সমন্বয়ের কথা। কিন্তু এক্ষেত্রেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না মন্ত্রণালয়কে।
দেশের মার্কেট ব্যবস্থাপনায় জটিলতা হচ্ছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাজার ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু না হওয়ার দরুন বিশ্ববাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম কমছে না। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে বাংলাদেশে সেই তুলনায় বাড়ে অনেক বেশী। এটাও বাজার ব্যবস্থাপনায় জটিলতা ও মনিটরিংয়ের ঘাটতির কারণে ঘটে। এখন বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ নেই ব্যবসায়ীদের দাম কমাতে বাধ্য করতে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ যখন পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। দেশে পণ্যের দাম না কমার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ডলার সংকট। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ী আমদানিকারকেরা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার সংকট থাকলেও ডলার সংকট এতো তীব্র হওয়ার কথা নয়। এজন্য দায়ী অর্থ পাচার। দেশে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে কিংবা আমদানী ব্যয়ের চেয়ে রফতানী আয় বেশী হলে ডলারের এতো হাহাকার থাকতো না। এলসি খুলতেও এতো বেগ পেতে হতো না। আর পণ্য আমদানি যথেষ্ট হলে এবং কাঁচামাল সহ কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানি সাচ্ছন্দ্য ও পর্যাপ্ত হলে কলকারখানায় উৎপাদনও বৃদ্ধি পেতো। এতে দেশের বাজারে পণ্যের দাম কমতো। এছাড়া অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে জ্বালানী তেলের দাম অযৌক্তিকভাবে এতো বাড়ানো না হলে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যয়ও কমতো। এতেও হ্রাস পেতো পণ্যমূল্য। কিন্তু এসব জটিলতা ও সংকটে আটকে আছে আমাদের জীবনযাত্রার সুখ, সাচ্ছন্দ্য ও স্বস্তি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ সেই স্বস্তি শান্তিটুকু পেলেও এদেশের সাধারণ মানুষ তা পাচ্ছে না এসব কারণে।