সিলেট-ছাতক রেলপথে সুসংবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:০১ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘অবশেষে সুনামগঞ্জে খুলছে রেলের দিগন্ত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিলেট-ছাতক রেললাইনের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট চলতি সপ্তাহেই জমা হবে।
উল্লেখ্য, সিলেট-ছাতক ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপিত হয়েছিলো ১৯৫৪ সালে। সিলেট স্টেশন থেকে ছাতক পর্যন্ত রয়েছে খাজাঞ্চি, সৎপুর ও আফজলাবাদ রেলওয়ে স্টেশন। সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী, এই রেললাইন সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত নেয়ার। দাবি বাস্তবায়নের জন্য নানাভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছিলো আফজলাবাদ-দক্ষিণ খুরমা-শান্তিগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে যাবে রেললাইন। এর মধ্যেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করে এই রুটে ৪৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।
সিলেট-ছাতক রেললাইনের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট এ সপ্তাহেই জমা হবে বলে জানা গেছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। লক্ষণীয় যে, ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনে দু’টি পথের মতামত দেয়া হলেও রেলওয়ের দায়িত্বশীলদের বেশীরভাগই গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া ও কালীপুরের মাঝের হাওর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নিয়োগকৃত সমীক্ষা দল ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া পর্যন্ত ইতোপূর্বে সমীক্ষা করেছে। আবার ছাতক দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত একাধিকবার ঘুরে দেখেছেন সমীক্ষক দল। দেখা গেছে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় নানা বিষয় বিবেচনায় এনে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত অর্থাৎ সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের পাশ দিয়ে রেললাইন স্থাপনের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এর চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা হয়নি বলে জানা যায়নি। রেলওয়ের দায়িত্বশীল জনৈক প্রকৌশলী জানান, সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ বর্ধিত করার জন্য দুই পর্যায়ে কাজ চলছে। একটি হচ্ছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, অপরটি নকশা প্রণয়ন। চুক্তি অনুযায়ী চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।
যা-ই হোক, আশার কথা, শেষ পর্যন্ত সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সিলেট-ছাতক রেললাইন পুনরায় চালুকরণ এবং এই লাইনকে সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিলেট-ছাতক রেলযোগাযোগ দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকায় এই অঞ্চলের মানুষ যাতায়াতের সহজ ও কম ব্যয়বহুল পন্থাটি ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে যোগাযোগের অসুবিধার পাশাপাশি তাদেরকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা, বাস-মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। শুধু যাত্রী নয়, মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও অসুবিধা হচ্ছে রেলযোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা বাণিজ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। লক্ষণীয় যে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে ছাতক-সিলেট ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো। এর মধ্যেই গত বছরের ১৬ জুন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বন্ধ এ রেলপথটি যেনো এখন ধ্বংসস্তূপ। এর ফলে এ রুটে পুনরায় রেল চলাচল নিয়ে ছিলো অনিশ্চয়তা।
স্থানীয়রা জানান, ছাতক উপজেলার আফজলাবাদ রেলস্টেশন থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত রেললাইনের অবস্থা খুবই নাজুক। করোনা মহামারির আগে পর্যন্ত এই রেলপথ সচল ছিলো। সিলেট থেকে ছাতকে ট্রেনের ভাড়া ১০ টাকার বিপরীতে বাসের ভাড়া বর্তমানে ৬০ টাকারও বেশী এবং সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। এই রেলপথ চালু হলে যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যয় অনেক কমে আসবে।
এ অবস্থায় সিলেট-ছাতক রেলওয়ে যোগাযোগ সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত বর্ধিত করে চালুর উদ্যোগটি যে এ অঞ্চলের লাখো লাখো মানুষকে বিশেষভাবে উপকৃত করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।