পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিন সামনে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:২৫ অপরাহ্ন
গত শনিবার হবিগঞ্জ জেলাধীন বাহুবল উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা চাচাতো ভাইবোন। তারা বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুরের কাছে খেলাধুলা করছিলো। এক পর্যায়ে তারা খেলতে খেলতে পুকুরের পানিতে ডুবে যায়। ঘটনাটি অত্যান্ত মর্মান্তিক। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে পানিতে ডুবে ১৩ হাজার শিশু মারা যায়। আর ৮০ শতাংশ শিশুর মৃত্যু ঘটে বাড়ি থেকে ২০ গজ দূরে পুকুর, ডোবা বা নালায় পানিতে পড়ে। প্রায় প্রতিদিন সব বয়সী ৫০ জন, ১৮ বছরের নিচে ৪০ জন এবং ৫ বছরের নিচে প্রায় ৩০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
জানা গেছে, গত বছর পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু বরিশাল ছিলো চর্তুথ স্থানে। এই জেলায় খাল বিল নদী নালা বেশি। সেখানে বছরে ১৩১ শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। জিএইচআইয়ের তথ্য অনুসারে দেশে ২০২২ পানিতে ডুবে ৯ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। এ সময় পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ছিলো ৯ বছরের কম বয়সী শিশু। এর আগের বছরের তুলনায় এই হার ৮ শতাংশ বেশি। এসব শিশুর ৬১ শতাংশ তাদের চতুর্থ জন্মদিনের আগেই মারা গেছে।
গত ১২ মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পানিতে ডুবে ১ হাজার ১৩০ টি মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ২০১০ ও ২০২১ সালে ৯ বছর বয়সীদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার ছিলো যথাক্রমে ৬৫ ও ৭৩ শতাংশ। এই ২ বছরে পানিতে ডুবে যথাক্রমে ৮০৭ ও ১ হাজার ৩৪৭ টি মৃত্যুর কভর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ২০২২ সালে পানিতে ডুবে মৃতদের ৯৪ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর মধ্যে ৪ বছর বা এর কম বয়সী ৫৫৬ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৩৬৩ জন, ১০ থেকে ১৪ বছরের ১০২ জন এবং ১৫ থেকে ১৮ বছরের ৪৩ জন। ৬৬ জনের বয়স ছিলো ১৮ বছরের বেশি।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর পানিতে ডুবে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টি ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশে যেখানে প্রতি বছর বন্যার দরুণ স্থলভূমির বিশাল একটি অংশ তলিয়ে যায়, সেখানে সচেতনতা ও সাঁতারে দক্ষতার অভাব জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান। গ্রামীণ এলাকার শিশুরা, যারা জলাশয়ের আশেপাশে বেড়ে ওঠে তারাও প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। পানিতে ডোবা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ এবং বিশ^ব্যাপী দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর তৃতীয় কারণ। বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণগুলোর একটি পানিতে ডুবে যাওয়া। ডব্লিউএইচও ডুবে যাওয়া রোধে বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ সুপারিশ করেছে এবং একটি মাল্টিসেক্টরাল উদ্যোগের প্রচার করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, মাল্টি সেক্টরাল সহযোগিতা বৃদ্ধি, ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এই ট্রাজেডি রোধ করতে পারি এবং সবার জন্য একটি নিরাপদ স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত অর্জন করতে পারে।
তথ্য প্রমাণ বলে, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ করা যায়। পরিবার ও কমিউনিটি অর্থাৎ এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশু ও কিশোর কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক স্কুলের শিশুদের জন্য শিশুযত্ম কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এব্যাপারে প্রচারণামূলক কার্যক্রমে মিডিয়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক বিভিন্ন সংস্থা, এলাকার নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে পানিতে ডুবে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির সামাজিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। প্রশাসন এ বিষয়ে আইনানুগ ও সমন্বয়কারী কার্যক্রম ও পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এ দিকে দৃষ্টি প্রদানের আহবান জানাচ্ছি।