জীবিত থাকাকে জীবন-যাপন বলা যায় না
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০২৩, ১২:৩০:২৮ অপরাহ্ন
দফায় দফায় বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি এদেশে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, কিছু পণ্যের দাম বাড়তে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে কিছু সেবারও দাম। এসব পণ্য ও সেবার মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল, জ্বালানী তেল, বিদ্যুৎ এবং চিনি। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও সেবা। এগুলোর মূল্যবৃদ্ধি মানে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বৃদ্ধি নতুন চাপ ও দুর্ভোগ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ভেজিটেবল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য এখন থেকে ১৯৯ টাকা গুণতে হবে ক্রেতাকে। আগে এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম ছিলো ১৮৭ টাকা।
সংস্থাটির বক্তব্য হচ্ছে ভোজ্য তেল আমদানিতে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় সোয়াবিন তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী এখন থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৭৬ টাকায় এবং ৫ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকায় ও খোলা পাম সুপার অয়েল প্রতি লিটার ১৩৫ টাকায়।
অপরদিকে বাজারে চিনির দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত চিনি কমই পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি খোলা চিনির জন্যও ভোক্তাদের দিতে হচ্ছে প্রতি কেজির মূল্য ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। বলা হচ্ছে, সরবরাহ স্বল্পতার কারণে কোন কোন বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী। গত ৮ এপ্রিল সরকার খোলা চিনির জন্য প্রতি কেজি ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে। যদিও ভোক্তারা এই মূল্যের কঠোর বিরোধিতা করে আসছেন। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, দোকানে প্যাকেটজাত চিনি নেই। গত মাসের শেষ দিকে ঈদুল ফিতরের পর থেকে চিনির সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। পাইকারী কোম্পানীগুলো সরবরাহ কম হওয়ায় সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির উচ্চমূল্যকে সরবরাহ স্বল্পতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন, যা অভ্যন্তরীন সরবরাহকে প্রভাবিত করছে।
জানা গেছে, আবারো বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। আইএমএফ’র ঋণপ্রাপ্তির শর্তানুযায়ী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আইএমএফ’র ঋণের বিপরীতে সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ৫ শতাংশ। চলতি মাসে কিংবা আগামী মাসের যে কোন সময় দাম বাড়ানোর ঘোষণা হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে ৩ ধাপে ৫ শতাংশ হারে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। পাইকারী বিদ্যুদের দাম আরো ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এবং খুচরায় বাড়তে পারে ৫ শতাংশের মতো। শুধু বিদ্যুৎ নয় জ্বালানী তেলের দামও আবার বাড়ানোর কথা শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, আইএমএফ’র ঋণের শর্ত পূরণে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ফর্মুলায় জ্বালানী তেলের মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের মূল্যের সঙ্গে দেশের বাজার সমন্বয় করতে একটি কাঠামো তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা করে নতুনভাবে জ্বালানীর মূল্য সমন্বয় করা হবে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম বাড়তি থাকলেও সরকার ভর্তুকি দিয়ে দেশের বাজারে তেল বিক্রি করেছে। আবার ২০১৯-২০২০ সালে বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমলেও দেশের বাজারে খুব একটা কমেনি।
উপরোক্ত তথ্যাবলী থেকে দেশে নিত্যপণ্য ও সেবার মূল্য সংক্রান্ত এক শংকা সৃষ্টিকারী চিত্র ফুটে ওঠেছে। নতুন করে জ্বালানী তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে প্রায় প্রতিটি পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি। এতে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, ফলে বাড়বে পণ্যমূল্য। বৃদ্ধি পাবে জনদুর্ভোগ। আর খাদ্যপণ্য হিসেবে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম সীমিত আয়ের জনগণের জন্য বাড়তি দুর্ভোগ সৃষ্টি তথা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতোই।
সরকার আবারো ডলারের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলেও বাড়বে আমদানি পণ্যের দাম। এভাবে আইএমএফ’র ঋণের খেসারত দিতে ও দুর্নীতির মূল্য চুকাতে গিয়ে দফায় দফায় অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধির মাঝে চলছে এদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। এটাকে জীবিত থাকা বললেও বেঁচে থাকা বলা মুশকিল। কারণ কোন মতে জীবন ধারণকে ভালোভাবে বেঁচে থাকা বলা যায় না কোনভাবেই।