যে শব্দে কম্পিত স্বৈরাচারী হৃদয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:০৩ অপরাহ্ন
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অর্থ লুটপাটের কোন পথই অব্যবহৃত রাখেনি তাদের বিগত দেড় দশকের শাসনামলে। এই লুটপাটের পথ সহজ ও উন্মুক্ত করতে তারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধা ও শেখ মুজিবের মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ কিংবা ম্যুরাল স্থাপনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে ব্যাপকহারে ব্যবহার করেছে। মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতীদের জন্য চাকুরি, স্কুলে ভর্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা চালু করে বিগত সরকার। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য এই কোটা বা সুযোগ সুবিধা প্রকৃত ব্যক্তিরা যতোটুকু পেয়েছেন, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি এ ধরণের কোটা ও সুযোগ সুবিধা লুটে নিয়েছে স্বৈরাচারী সরকারের নেতামন্ত্রী ও তাদের ঘনিষ্টরা। এ ধরণের অবৈধ ও অন্যায় সুযোগ সুবিধা গ্রহণের বিষয়গুলো এখন ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ধরণের গণবিরোধী শোষণমূলক কর্মসূচী ও কর্মকান্ড বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গতকাল মিডিয়ায় ‘বাতিল হচ্ছে গণভবন ও কলোনি কোটা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সরকারি বেসরকারি স্কুলে ভর্তিতে এবারো লটারীর মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে। এ বার প্রকাশিত ভর্তি নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নাতি-নাতনি কোটা বাদ দিয়ে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটায় ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরো কিছু কোটা প্রথা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো গণভবন কোটা এবং কলোনি কোট। জানা গেছে, রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে উপস্থিত গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন গণভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা শতভাগ কোটা সুবিধায় ভর্তির সুযোগ পেতো। এবার সেই কোটা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রাজধানীর নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মতিঝিল এজিবি কলোনি কোটা রয়েছে। কলোনিতে বসবাস করা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলেমেয়েরা অলিখিতভাবে কোটা সুবিধা পেয়ে আসছে। সেই কোটাও এবার বাতিল হবে।
এভাবে চাকুরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা চালু করে স্বৈরাচারী হাসিনার অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার গত দেড় দশকে কতো লক্ষ কোটি টাকার অবৈধ সুযোগ সুবিধা ও অর্থ সম্পদ লুটে নিয়েছে এর হিসাব কেউ রাখে না, তা শুদু ধারণা করা যায়। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ভাতার নামে বিগত বছরগুলোতে হাজারো কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। আর এই লুটপাটের জন্য নেতা মন্ত্রী এমপিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান নাতী পুতি সৃষ্টি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের জন্ম হয়নি এমন অসংখ্য ব্যক্তিকেও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে তাকে ভাতা, সন্তান ও নাতিদের চাকুরি ও ভর্তিসহ বহুবিধ সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর এসব অর্থ ও সুযোগ সুবিধা পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি নয় এমন আওয়ামী লীগৈর লোকজন ও তাদের ঘনিষ্টরা। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থের বিনিময়ে এসব কোটার সুবিধা বিক্রয় করা হয়েছে।
দেশবাসীর জন্য সৌভাগ্য এবং হাসিনার জন্য চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই কোটা সিস্টেম। যে কোটা আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের থোড়াই কেয়ার করেছিলেন শেখ হাসিনা, এটাই তার জীবনকে শুধু বিপর্যন্ত নয়, প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন হয়তো ‘কোটা’ শব্দটি শুনলেই তিনি আঁতকে ওঠেন। হয়তো এই শব্দ শুনে আঁতকে ওঠেন তার স্বৈরশাসনের দোসররা।
যা-ই হোক অন্যায়ের ফল খারাপ হতে বাধ্য। বিলম্বে হলেও অন্যায়, অপরাধ ও অপকর্মের বিষময় ফল ভোগ করতে হয় অন্যায়কারী ও অপরাধীকে। বিগত দেড় দশকে জাল কাগজপত্র সার্টিফিকেট বানিয়ে কোটার সুবিধা নিয়ে যারা সরকারি চাকুরি করছেন, বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন, তারা এখন চরম আতঙ্কে। অনেকে ভয়ে চাকুরি ছেড়ে বিদেশ চলে গেছেন, অনেকে শঙ্কা নিয়ে চাকুরি করে যাচ্ছে। যে কোন সময় তাদের চালিয়াতি ও জালিয়াতি ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটার সুবিধা ভোগকারীদের এখন বড়ো দুঃসময় চলছে। আর এই দুঃসময়ের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী, দায়ী তাদের রাজনৈতিক গড ফাদাররা।