কারো জন্য ‘ভালা’, কারো জন্য জ্বালা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন
ঘটনাটি মজার হলেও একটি বিশেষ দেশ ও গোষ্ঠীর জন্য দুঃখ ও হতাশার। এটা গতকাল প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়ায়। যে প্রতিবেশী দেশটির সাথে বিগত দেড় দশক ধরে জটিল বৈরী সম্পর্ক বজায় ও বহাল রেখেছে স্বৈরাচারী হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার। নামেমাত্র কূটনৈতিক বাণিজ্য ছিলো এই প্রতিবেশী দেশটির সাথে। শুধু ভারতকে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে এবং ভারতকে খুশী রাখতে ভারতের বৈরী দেশটির সাথে তেমন কোন যোগাযোগই রাখেনি হাসিনা সরকার। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই দেশটিকে চিনে ফেলেছেন, দেশটি হচ্ছে পাকিস্তান। একথা সত্য যে, এদেশের জনগণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। পাকিস্তানীদের হাতে নিহত হয়েছেন এদেশের কয়েক লাখ মানুষ, নির্যাতিত নিপীড়িত হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এসব কিছুই সত্য। তবে বিগত পঞ্চাশ বছরে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অনেক চেষ্টা করলেও এবং এক্ষেত্রে এদেশের সিংহভাগ মানুষের সমর্থন থাকলেও হাসিনা সরকারের শুধুমাত্র ভারত তোষণ নীতির কারণে এটা সম্ভব হয়নি। ভারত নিজে তার শত্রু দেশ পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক গড়ে তুললেও বাংলাদেশকে কখনো স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়তে দেয়নি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে একচেটিয়া ব্যবসা ও ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ বজায় রাখা বাংলাদেশকে দুর্বল হীনবল করে রাখার দুরভিসন্ধী থেকেই তা করেছে ভারত। এতে বাংলাদেশ একদিকে যেমন ভারতের বাণিজ্যিক শোষণে শোষিত হয়েছে, তেমনি প্রতিবেশী শক্তির অধিকারী শক্তিশালী দেশ পাকিস্তানের সামরিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা-ই হোক, হাসিনার পতনের সাথে সাথে বাংলাদেশের ওপর হাসিনা ও তার প্রভু রাষ্ট্র ভারতে শাসন-শোষণের কঠিন নিগড় ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে দ্রুত সম্পর্ক পুনর্গঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পাকিস্তানের করাচী বন্দর থেকে এসেছে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরে। আর এ নিয়ে তুমুল হৈ চৈ শুরু করেছে ভারতের মিডিয়াগুলো। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মিডিয়াও তীব্র ক্ষোভ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক জাহাজ আসার কারণে।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের সরকার ও জনগণ চাইলে যে কোন দেশের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য ও সম্পর্ক গড়তে ভাংতে পারে নিজ দেশের স্বার্থে। এতে ভারত কিংবা অন্য কোন দেশের আপত্তি করার বা বাধা দেয়ার কোন অধিকার নেই। কিন্তু অনধিকার চর্চা করছে ভারতীয় মিডিয়াগুলো তাদের সরকারের মৌন সম্মতি এমনকি পৃষ্ঠপোষকতায়, এমন অভিমত সচেতন অভিজ্ঞ মহলের। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের একটি মিডিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম দখলেরও হুমকি ও উস্কানীও দিয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত তার উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছে। পাকিস্তানী বাণিজ্যিক জাহাজ বাংলাদেশে এলে তাদের দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, তাই পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ করতে পারবে না স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ এক বিস্ময়কর খোঁড়া অজুহাত ও প্রতিবেশী দেশে অন্যায় হস্তক্ষেপ-অনধিকার চর্চার ঘৃণ্য নজীর।
যা-ই হোক, বাংলাদেশ এসবের কোন তোয়াক্কাই করছে না এবং কখনো করবে না যতোদিন এদেশ ভারতের খপ্পর থেকে নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম সত্বাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে। কারণ আগ্রাসী ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে গ্রাস করার নিদেনপক্ষে দেশটির ওপর তাদের আধিপত্য বহাল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে ঘটনার কথা বলেছিলাম লেখাটির শুরুতে। সেটা হচ্ছে, সম্প্রতি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত তার স্ত্রীকে রিকশায় বসিয়ে ঢাকার রাস্তায় রিকশাটি চালিয়েছেন। এ দৃশ্য এদেশের জনগণকে আনন্দ ও বিনোদন দিলেও চিত্তে যে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ভারত ও তাদের এদেশীয় সেবাদাস দোসরদের, এতে সন্দেহ নেই।