ষড়যন্ত্রমূলক সাংবাদিকতা বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ঘোর সমর্থক হিসেবে পরিচিত একটি দৈনিক পত্রিকায় সম্প্রতি ‘আলুর বাজার কিছুটা নি¤œমুখীঃ দাম কমে কেজি প্রতি ৩০০ টাকা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শীত আসতেই বাজারে উঠছে নানা ধরনের নতুন নতুন সবজি। আলুর জন্য বিখ্যাত উত্তরবঙ্গের বগুড়ায় বাজারে ওঠেছে আগাম জাতের নতুন আলু। তবে দাম নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। গতকাল বাজার ঘুরে আলু দেখা গিয়েছিলো নতুন পাকড়ি জাতের লালচে আলু।
সবাই জানেন, আলুর কেজি ৫০/৬০ টাকায় ওঠানামা করছে। কখনো কখনো প্রতি কেজি আলু ৭০/৮০ টাকায়ও বিক্রি হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত কয়েক মাস এমনকি বছর খানেক যাবৎ এভাবেই চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে কোন কোন পত্রিকায় আলুর মূল্য নিয়ে এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে, যাকে সংবাদ না বলে গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা বলা যায়। এতে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি আলু ছিলো ৪০০ টাকা, যা আজকে কমে হয়েছে কেজি প্রতি আকার ও প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
‘আলুর কেজি ৩০০ টাকা’ এমন শিরোনাম দেখে অনেক ক্রেতাকে রীতিমতো বিভ্রান্ত হতে দেখা গেছে। অনেকে পত্রিকা অফিসে কিংবা সাংবাদিকদের ফোন করে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। কিন্তু যখন জানতে পেরেছেন, এটা মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসা একটি বিশেষ জাতের আলুর দাম স্বাভাবিক প্রচলিত আলুর দাম ৫০/৫৫ থেকে ৬০/৭০ টাকা তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। একথা সত্য যে, বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৬০-৭০ টাকা হওয়াটা অস্বাভাবিক। দেখা গেছে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দেশজুড়ে আলুর দাম বাড়িয়েছে। ২০/৩০ টাকা কিনে ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি করছে। এভাবে তারা প্রতি কেজিতে ৩০/৪০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা লুটছে। এ নিয়ে ক্রেতা ভোক্তাদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে।
আলুর দাম নিয়ে সাধারণ ক্রেতারা যখন নাকাল তখন পত্রিকায় ‘আলুর কেজি ৩০০’ শিরোনামে ঢালাও সংবাদ প্রকাশ মানুষকে অধিকতর আতংকিত করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এসব কাজই করে যাচ্ছে একশ্রেণীর সাংবাদিক ও মিডিয়া। তার সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি ও ক্ষোভ সৃষ্টির অপচেষ্টা থেকেই এ ধরনের শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে দুরভিসন্ধী থেকেই যে এসব করা হচ্ছে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
হাসিনার পতনের পর হাসিনা ও তার দোসররা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অজনপ্রিয় ও ব্যর্থ করার এজেন্টা নিয়ে নেমেছে। বলা যায়, অনেকটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই তারা এমন অপকর্ম করছে। যে পত্রিকাটি ‘আলুর কেজি ৩০০ টাকা’ শিরোনামে সংবাদ ছেপেছে ওই পত্রিকাই এর মাস দেড়েক আগে ‘আকাশ ছুঁলো আলুর দাম, কেজি প্রতি ৪০০’ শিরোনামে অপর একটি সংবাদ ছেপেছিলো। অথচ একই সময়ে অন্য একটি পত্রিকায় এই সংবাদের শিরোনাম ছিলো ঢাকার বাজারে নতুন আলু, দাম ১২০ টাকা। এই সংবাদে নতুন জাতের আলুর কথা ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে। এদেশে যখন কিছু কিছু সবজি নতুন বাজারে আসে তখন বিক্রেতারা এগুলোর দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেয়। যেমন মাস খানেক আগে যখন প্রথম বাজারে শিম উঠে, তখন এর কেজি ২শ থেকে আড়াইশ টাকা ছিলো। অথচ এখন প্রতি কেজি শিম ৬০/৭০ টাকা কিংবা এর চেয়ে কিছু বেশী। এটাই স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল দাম। আলুর কেজি ৩০০/৪০০ টাকা এবং শিমের দাম দুইশ/আড়াইশ’ কখনোই স্বাভাবিক বাজারদর নয়। এই দামে শুধু সৌখিন ও বিত্তশালী লোকজনই এসব সবজি কিনে থাকেন। পরে যখন এগুলোর দাম স্বাভাবিক হয়ে আসে তখন ক্রেতা সাধারণ এগুলো কিনেন।
যা-ই হোক, এদেশের কিছু মিডিয়া এখনো স্বৈরাচারী হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসিত করার স্বপ্ন দেখছে। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সরকারকে বিভিন্নভাবে বদনামী ও অজনপ্রিয় এবং ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। আর আলু নিয়ে উপর্যুপরি এ ধরনের স্টান্ট মার্কা সংবাদ প্রকাশ এমন দুরভিসন্ধী ও চক্রান্তেরই যে অংশ এতে কোন সন্দেহ নেই।
দৈনিক যে পত্রিকাটি আলুর কেজি ৩০০/৪০০ টাকা বলে সংবাদ ছেপেছে, সেই পত্রিকা গত দেড় দশক এমনকি তারও আগে থেকে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিন বিষোদগার ও বিদ্বেষমূলক মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। আর এর প্রতিদান হিসেবে এর কর্ণধার ব্যক্তি হাসিনার কাছে কয়েকশত কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের সুপারিশের দাবি জানান হাসিনা পালিয়ে যাবার আগে। ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিলো, ‘সালমানের সুপারিশে গ্লোব জনকন্ঠকে ২২৫ কোটি টাকা ঋণ, এখন পুরোটাই খেলাপি’।