অগ্নিকান্ড লংকাকান্ড!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন
গত শুক্রবার সংঘটিত এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নগরীর চালিবন্দর এলাকায় একটি গোডাউনসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুষ্ক মৌসুম আসন্ন। বৃষ্টি বাদলার দিন প্রায় শেষ। তাই এ সময়ে বাংলাদেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার মানসি প্লাজা নামক একটি বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অগ্নিকান্ডে কয়েকটি দোকান পুড়ে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া সম্প্রতি শেরপুরে এক অগ্নিকান্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বলা বাহুল্য, বর্তমানে মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে অগ্নিকান্ড অন্যতম। এটিকে অনেকে নগরায়নের অন্যতম অভিশাপও বলে থাকেন। জনসংখ্যার ঘনত্ব অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন এবং নির্মাণ নীতিমালা (বিল্ডিং) অনুসরণ না করার কারণে সাধারণত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৮ সালে সারা দেশে মোট ৯ হাজার ৩১০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আর ২০১৮ সালে ঘটে ১৯ হাজার ৬৪২ টি। এ হিসাব অনুসারে, ১০ বছরে বাংলাদেশে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা বাড়ে ১১১ শতাংশ। ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সারা দেশে প্রায় ২ লাখ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। এতে অন্তত ১ হাজার ৯৭০ জন নিহত হন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ‘বার্ষিক পরিসংখ্যান ডাটা-২০২২’ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে মোট ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে মোট আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা। ডাটা অনুসারে, ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে ৯ হাজার ২৭৫টি অগ্নিকান্ড ঘটে। বিড়ি সিগারেটের জ¦লন্ত টুকরা থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডের ঘটনা ৩ হাজার ৮৭৮টি। গ্যাস ও মাটির চুলা থেকে সংঘটিত হয় ৩ হাজার ৩৬৮টি অগ্নিকান্ড। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ লাইনের আগুন থেকে অগ্নিকান্ড ঘটে ৭৯৫টি। এছাড়া খোলা বাতি ব্যবহার, উত্তপ্ত ছাই বা জ¦ালানী, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণ, শত্রুতামূলক ও উচ্ছৃংখল জনতা কর্তৃক অগ্নিসংযোগ, বজ্রপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাজি পোড়ানো, মাত্রাতিরিক্ত তাপ, মেশিনের মিসফায়ার এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্জ্বলন থেকেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটে বাসাবাড়ি বা আবাসিক ভবনে। অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫৮টি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে রান্নাঘরে। সংখ্যা ২ হাজার ২৮৭টি। আর্থিক ক্ষতি ২০ কোটি ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৬২৬ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ অগ্নিকান্ড ঘটেছে বিভিন্ন দোকান ও টংয়ে। অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ২ হাজার ১১৪টি। আর্থিক ক্ষতি ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২২ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫৫টি অগ্নিকান্ড ঘটে। এবং এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
উল্লেখিত পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান যে, প্রতি বছর অগ্নিকান্ডের ফলে বাংলাদেশ বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। প্রাণহানি ও আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। আর এসব ঘটনা বেশি ঘটছে শুষ্ক মৌসুমে। তাই এবার শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রয়োজনীয় প্রতিরোঘ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।