টেনে ধরা হচ্ছে দুর্নীতির রাশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন
কিছুদিন আগে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন শেখ হাসিনার শাসনামলে জনৈক আমলার অবৈধ পন্থায় অর্জিত ২০ কোটি টাকা প্রসঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা বৈধ পন্থায় এক কোটি টাকা অর্জনের কথা ভাবতে পারি না, তিনি ২০ কোটি টাকার মালিক। নেতা-মন্ত্রী-এমপি’দের কথা বাদ দিলে একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে বর্তমান বাজারে খেয়ে পরে ২০ কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স করা যে অসম্ভব, এতে কোন সন্দেহ। এতো টাকা ব্যাংকে জমাতে বা গচ্ছিত রাখতে হলে তার অন্যান্য ব্যবসা, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে আয় কিংবা ধনাঢ্য বিত্তশালী পরিবারের লোক হতে হবে। কিন্তু ওপরে যে আমলা সম্পর্কে উপদেষ্টা সাখাওয়াত মন্তব্য করেছেন, তার এমন কোন আর্থিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। চাকুরীকালীন সময়েই তিনি এই অর্থ অর্জন করেছেন। সোজা কথায় দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন।
বাংলাদেশের আর্থিক দুরবস্থার একটি বড়ো কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। আর এই দুর্নীতির সম্মুখ সারিতে আছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেশে সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যার চেয়ে অসৎদের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এদের সবচেয়ে বেশি ‘বংশ বৃদ্ধি’ ঘটেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত দেড় দশকের শাসনামলে।
সম্প্রতি বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, গ্যাসের জন্য হাসিনার শাসনামলে জ¦ালানী প্রতিমন্ত্রীর বাসার সামনে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তার কাছ থেকে অনেক লেকচার শুনতে হয়েছে। মিনিমাম ইজ্জত পর্যন্ত তিনি পাননি। এছাড়া জি¦ স্যার, জি¦ স্যার বলতে হয়েছে তাকে। তিনি জানান, ঐ সময় শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ পেতে তাকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিলো। এগুলো হলো বাস্তব অভিজ্ঞতা। যা-ই হোক, এই আমলাদের দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরকারী চাকরীজীবীদের আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে বলেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারী স্টাফদের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ (৩০.১২.২০২২ইং তারিখের সংশোধনীসহ) এর বিধি-৬৩ অনুযায়ী সব সরকারী কর্মচারীর জন্য সম্পদ বিবরণী দাখিল করা আবশ্যক। বিধিটি আগেও ছিলো। কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ হয়নি কিংবা অপপ্রয়োগ হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলের আমলারা এর কোন তোয়াক্কাই করেননি এবং এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম বা তদুর্ধ গ্রেড) কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের নিকট সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন। এছাড়া গেজেটও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ (১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের সম্পদ বিতরণী দাখিল করবেন।
লক্ষণীয় যে, নির্ধারিত সময়ে মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোন ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের ক্ষেত্রে কোন রূপ অসংগতি পরিলক্ষিত হলে সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপরোক্ত আইনটি যদি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এদেশ থেকে বিশেষভাবে প্রশাসন থেকে দুর্নীতি বহুলাংশে দূর হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ কোন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অস্বাভাবিক আয় সম্পদ বিবরণীতে সন্নিবেশিত হলে কিংবা এটা থেকে গোপন করা হলে, তা ধরা পড়বে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে। আর এই ভয়ে কোন দুর্নীতিবাজ আমলা-কর্মচারী দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ অর্জনে সাহসী হবে না।