আসছে চিকিৎসকদের ফী নির্ধারনে আইন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১:০৭:১৫ অপরাহ্ন
চিকিৎসকদের ফী নির্ধারণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট স্বাধীন বাংলা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিরোধিতায় তা করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে চিকিৎসার মতো সেবাধর্মী পেশাকে একটি শোষণমূলক নিন্দনীয় পেশায় পরিণত করেছেন একশ্রেণীর লোভী ও বিবেকহীন চিকিৎসক। রোগীদের নিকট থেকে তারা ইচ্ছেমতো বড়ো অংকের চিকিৎসা ফী আদায় করছেন। মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছেন আর্তপীড়িত রোগাক্রান্ত মানুষের সাথে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে সরকার জনগণের ব্যাপক দাবির প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকদের ফী নির্ধারণসহ নানা সংস্কারের প্রস্তাব করে স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করে। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের বিরোধিতায় তা আলোর মুখ দেখেনি। স্বৈরাচারী কায়দায় সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ২০১৮ সালে আবার খসড়াটি মন্ত্রীসভায় নীতিগত অনুমোদন হয়। কিন্তু একই কায়দায় এটাকে আবারো চাপা দেয়া হয়। এমনটি চলতি বছরও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সামন্তলাল সেনও আইনটি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সফল হননি কায়েমী মানবতাহীন উক্ত চিকিৎসক সংগঠনের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে। তবে এখন দিন পাল্টেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অংশীজনদের সঙ্গেও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আইনটির প্রস্তাবনায় কিছু সংযোজন বিয়োজন করে নতুন করে প্রাথমিক খসড়া তৈরী করেছে, যা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এসব বিষয়ে মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জনগণ ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিবেচনা সংযুক্ত করে পরে এটি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর এটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং অর্থাৎ পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে উপদেষ্টা পরিষদে পাশ হলে অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকরা ইচ্ছেমতো ফী নির্ধারণ করেন। এখানে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এই আইনটি হলে ইচ্ছেমতো ফী নির্ধারণ করা যাবে না। শুধু চিকিৎসকদের ফী-ই নয়, অন্যান্য নমুনা (রোগ নির্ণয়ে) পরীক্ষা নিরীক্ষার ফী নির্ধারণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া প্রতি বছরই প্রচুর রোগী বিদেশে যান। বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে এখানেই বিদেশী হাসপাতাল হবে।
চিকিৎসা সেবায় অবহেলাজনিত ক্ষতি, যেমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারানো, দৃষ্টিশক্তি হারানো, চিকিৎসা খরচ বেশী রাখা, প্রজনন ক্ষমতা হারানো এসব সংঘটিত হলে এ আইনে মামলা করা যাবে। খসড়ায় বেসরকারী হাসপাতালকেও মুমুর্ষু ও সংকটাপন্ন রোগীর জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সম্বলিত বিধান রাখা হয়েছে। নতুন খসড়ায় চিকিৎসক, হাসপাতাল ও রোগী তিন ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
লক্ষণীয় যে, অনেক চিকিৎসক ফী নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করে বলেছেন, আইনজীবী, প্রকৌশলী ও অন্যান্য পেশায় ফী নির্ধারণ না করে শুধু চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ফী নির্ধারণ বৈষম্যমূলক। এক্ষেত্রে একটি কথা বলা যায় যে, চিকিৎসা পেশা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জীবন রক্ষাকারী পেশা। মানুষ রোগাক্রান্ত অসহায় অবস্থায় একজন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়। এ চরম অবস্থায় রোগীর কাছে অযৌক্তিক ফী দাবি করা যেমন অন্যায় তেমনি অমানবিক। এছাড়া দেশে বিদেশী উদ্যোগে ও বিনিয়োগে বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার একাধিক প্রস্তাব থাকা সত্বেও স্বৈরাচারী সরকারের দুর্নীতিপরায়ন স্বাস্থ্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এর বিরোধিতা করে। তাদের একচেটিয়া আধিপত্য ও দুর্নীতির সুযোগ কমে যাওয়ার আশংকায় তারা এমনটি করে। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সরকার এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে। আশা করা যায় এটাও অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হবে। আমরা সরকারের এই স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি।