ভাঙ্গছে পণ্য আমদানির সিন্ডিকেট
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:২২ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সিন্ডিকেট ভাঙ্গার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘খাতুনগঞ্জে ভেঙ্গেছে আমদানির সিন্ডিকেট, বাজারে সুফল মেলার আশা’ শিরোনামে প্রকাশিত এই সংবাদে বলা হয়, দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দেড় দশক পর ভেঙ্গেছে আমদানির সিন্ডিকেট। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা আওয়ামী পন্থী ব্যবসায়ী ও নেতারা না থাকায় পণ্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বাজারে শিগগিরই এর সুফল মিলবে, বলছেন তারা। সংবাদে বলা হয়েছে, প্রায় দেড় দশক ধরে খাতুনগঞ্জে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে এস আলম গ্রুপ। তাদের দাপটে কোনঠাসা ছিলো অন্য আমদানিকারকরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ জুলাই-আগস্ট মাসে ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে এস আলম গ্রুপ। স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের পতনের পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকটি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে। ভোজ্য তেল, ডাল, পেঁয়াজ, গমসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১৫ বছর খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাণিজ্য অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতো এস আলম, টিকে, বিএসএম, সিটি গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ। চট্টগ্রাম চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের ওপরেও ছিলো এসব গ্রুপের প্রভাব। সরকার পতনের পর এসব গ্রুপের প্রভাব আর নেই, গা ঢাকা দিয়েছেন অনেক মালিক ও ব্যবসায়ী নেতা। ফলে গত চার মাস ধরে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের ছোট ও মাঝারি আমদানিকারকরাও ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, বড়ো বড়ো কোম্পানীগুলো ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। এখন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ২০-২৫ বছর আগের মতো প্রতিযোগিতামূলকভাবে পণ্য আমদানি করতে পারছেন। লক্ষণীয় যে, মূলত: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার হয়ে সারা দেশে যায়। এই বাজারে প্রতিদিন লেনদেন হয় কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকা।
উপরোক্ত সংবাদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, গোটা জাতির জন্য শুভ বার্তাবাহী। এতোদিন শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা সিন্ডিকেট ভাঙ্গা নিয়ে দেশের জগনগণের সাথে তামাশা ও চরম প্রতারণা করেছে। অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বগলের নীচে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে দেশের জনগণকে সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য হম্বিতম্বি করেছে। কখনো কখনো বলেছে, সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব নয়। এতে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। অথচ স্বার্থের ভাগাভাগিতে গুটিকয়েক নিজেদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তথা অলিগারদের মধ্যে আমদানি ও ব্যবসার সুযোগ সীমাবদ্ধ না রাখলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম তাদের খেয়াল খুশি অনুযায়ী বাড়ানোর সুযোগ পেতো না। আমদানি ও বাণিজ্যে অধিক সংখ্যক ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া হলে বাজারে প্রতিযোগিতা হতো এবং পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকতো। কিন্তু হাসিনা ও তার দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী আমলারা এস আলম গ্রুপ ও বসুন্ধরা সিটি গ্রুপের মতো বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের হাতে একচেটিয়া ব্যবসা ও আমদানি তুলে দেওয়ার ফলে তারা গত দেড় দশক ধরে নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। ফলে এসব অলিগার তথা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী কোন পণ্যের দাম যা ঠিক করেছে, সরকারও সেটা নির্ধারণ বা অনুমোদন করেছে। ভোজ্য তেল নিয়ে তাদের তেলেসমাতির বিষয়টি দেশবাসীর ভুলে যাবার কথা নয়।
বর্তমানে সিন্ডিকেটের প্রাণকেন্দ্র খাতুনগঞ্জে সিন্ডিকেটের হোতাদের দৌরাত্ম্য নেই। তাই আশা করা যায়, এবার খাদ্যপণ্যসহ অনেক নিত্যপণ্যের আমদানি বাণিজ্য অতীতের প্রতিযোগিতামূলক বাজার পদ্ধতিতে ফিরে আসবে এবং কোন ব্যবসায়ীই পণ্যের দাম নিজেদের মর্জিমাফিক বৃদ্ধি করতে পারবে না। আর এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ কঠোর নজরদারি বজায় রাখবেন, এমন প্রত্যাশা ভোক্তা ক্রেতা সাধারণের।