‘ভারতের বাংলাদেশ নীতি ক্ষতিকর’
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪২:০৮ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক মানবজমিনে স্বাধীন বৈদেশিক নীতি বিশ্লেষক এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ফরেন সার্ভিস অফিসার জন ড্যানিলোভিজের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নিবন্ধে তিনি ভারতের বর্তমান বাংলাদেশ নীতি নিয়ে এমন কিছু বক্তব্য রেখেছেন, যা পাঠক সমাজে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ভুল বৈদেশিক নীতির সমালোচনার পাশাপাশি তিনি এ বিষয়ে ভারতের জন্য কল্যাণকর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
নিবন্ধে তিনি বলেন, আমি যখন ভারত সরকার, অন্যান্য ভারতীয় নেতা এবং প্রক্সিদের দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলো দেখি, তাদের উদ্দেশ্যে নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগে। বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের সাফল্য প্রচারের পরিবর্তে ভারতীয় নীতিগুলো দুর্বল ও অস্থিতিশীল বলে প্রতীয়মান হয়। কর্তৃত্ববাদী হাসিনার প্রতি সমর্থন তুলে নিয়ে জেনারেল জেডের সাথে সেতু নির্মাণের পরিবর্তে ভারতের কৌশলগুলো আরো বেশি ভারত বিরোধী মনোভাবের জন্ম দিচ্ছে। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করার পরিবর্তে ভারতীয় নীতি হলো- হিন্দু সংখ্যালঘুদের দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করে আন্তঃসাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানো। হতে পারে যে, এই কৌশল মোদী সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করবে, তবে এটি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থানকে উন্নত করার পরিবর্তে আরও কঠিন করে তুলবে। তিনি আরো বলেন, ভারতীয় প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে এর সম্ভাব্য পরিণতি হবে কোন সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন। বর্তমান পরিবেশে এটি সম্ভবত একটি কট্টর ভারত বিরোধী সরকারের জন্ম দেবে। তা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা অন্য কোন জোট দ্বারা গঠিত হোক না কোনো।
তিনি ভারতকে এই মর্মে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্যেই ভারতের স্বার্থ নিহিত। বর্তমানে আন্তর্জাতিক নেতাদের একটি বিস্তৃত জোট রয়েছে যার প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস এবং তার দলকে সফল করতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ভারত বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানের অংশ হতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী কণ্ঠের নেতৃত্বে যে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চলছে তা বন্ধ করা দরকার। হিন্দু সংখ্যালঘুদের স্বার্থেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশংসনীয় ব্যাপার হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস এবং তার দল তাদের কর্মের মূল্যায়নের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা স্বীকার করেছেন যে, তারা নিখুঁত নয় এবং ভুল সংশোধন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সংখ্যালঘুদের মর্যাদা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সহজ প্রতিক্রিয়া হলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী, সাংবাদিক ও সরকারগুলোর জন্য দরোজা খুলে দেয়া। তিনি বলেন বাংলাদেশকে সফল করতে ভারতেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখনই সময়, এ ব্যাপারে নয়াদিল্লীর কৌশল পুনঃমূল্যায়ন।
জন ড্যানিলোভিজের উপরোক্ত বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান যে, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের গৃহীত বর্তমান নীতি ও কৌশল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এবং ক্ষতিকর। এই নীতি ভারতের ক্ষমতাসীন মোদী সরকারকে কিছু সুবিধা দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ভারতের বৈদেশিক নীতির জন্য ক্ষতিকর। এই নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে শিক্ষা ও পরামর্শ গ্রহণ করলে ভারত যে তার পরারাষ্ট্র নীতিতে অন্ততঃ একটি সাফল্য পাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ দেশটি ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নিকট ও দূরের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো ক্ষমতাধর দেশগুলোও এখন ভারতকে বৈরী দেশ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করেছে।