শ্বেতপত্র হোক পথ প্রদর্শক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:১৩ অপরাহ্ন
বিগত শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের অর্থনীতির আসল চিত্র বা অবস্থা কখনো প্রকাশ পায়নি। দেশের জনগণ তার নিজ দেশের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেননি। এর কারণ কর্তৃত্ববাদী শাসক দেশের অর্থনীতির আসল চিত্র বা অবস্থা কখনো প্রকাশ করেনি কিংবা প্রকাশ করলেও মিথ্যা তথ্য তুলে ধরেছে জনগণের সামনে। আর আর্থিক দুর্নীতি, চৌর্যবৃত্তি ও অর্থ পাচারের বিষয়টি তো বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শে^তপত্র প্রণয়ন কমিটির সাম্প্রতিক খসড়া প্রতিবেদন সূত্রে প্রকাশ, আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে ২১০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। জানা গেছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সরকারী নথি ও বৈশি^ক প্রতিবেদন ব্যবহার করে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে শে^তপত্রে। সময়ের স্বল্পতার কারণে অর্থ পাচারের পুংখানুপুংখ পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। তবে কীভাবে অর্থ পাচার হয় এবং কীভাবে তা বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির তথ্য অনুযায়ী, কর ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানী পণ্যের ভুল ইনভয়েস অর্থাৎ চালানের কারণে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে বাংলাদেশ। শ্বেতপত্রে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির জনৈক সদস্য। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শীর্ষক আড়াইশ’ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে থাকছে অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে ২২টি অধ্যায়। এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের পরিস্থিতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব আয়, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও বৈষম্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতার বাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর ওপরও থাকছে বিশ্লেষণধর্মী পর্যবেক্ষণ।
বলা বাহুল্য, স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার সঠিক তথ্যটিও প্রকাশ করতে পারেনি এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। উন্নয়নের মিথ্যা তথ্য প্রচার করতে গিয়ে জনসংখ্যা, গড় আয়ূ মাথাপিছু আয় ইত্যাদিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। রফতানি আয়কে অনেক বেশী দেখানো হয়েছে। রিজার্ভ সম্পর্কেও দেয়া হয়েছে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য। ব্যাংক খাত ধ্বংসসহ দেশের অর্থনীতি যখন তলানীতে এসে ঠেকেছে, তখনো নেতামন্ত্রীরা দাবি করেছেন, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।
যা-ই হোক বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরণের রাষ্ট্রীয় প্রতারণা, প্রচার প্রোপাগান্ডার অবসান ঘটিয়ে জাতির সামনে দেশের আসল চিত্র বিশেষভাবে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সকল অনিয়ম অসংগতি ও দুর্বলতা দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আর এ লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছেন শে^তপত্র প্রকাশের। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, এই শ্বেতপত্র ঐতিহাসিক দলিল। এখান থেকে জুলাই অভ্যুত্থানের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা বের করা হবে। আমরা এই শে^তপত্র প্রকাশকে স্বাগত জানাচ্ছি জাতির পক্ষ থেকে। শে^তপত্র হোক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ প্রদর্শক।