আইনজীবী শামসুল হত্যায় ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৫, ৯:৫৯:২০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি একজনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও একজনকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ১৩ বছর ৯ মাস পর বহুল আলোচিত জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যা মামলার রায় হলো।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন শামসুল হক। পরে জানা যায়, সম্পত্তির লোভে তাঁর ছেলেসহ কয়েকজন মিলে তাঁকে সুরমা নদীতে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট ডিভিশনাল স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিচারক মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রামাণিক এ রায় দেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট আবদুল মুকিত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- এডভোকেট শামসুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের জাহের আলী ও ছাতকের আনসার আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাঁদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, মামলার আলামত নষ্ট করার অভিযোগে প্রত্যেকের ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিনকে একই ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেনকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলায় ৩০ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তবে রায় ঘোষণার সময় কোন আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, তারা সকলেই পলাতক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শব-ই-বরাতের রাতে নগরীর মীরবক্সটুলাস্থ বাসা থেকে নিখোঁজ হন শামসুল ইসলাম। এরপর তার ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না এসএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পরে ২২ জুলাই থেকে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না নিজেই আত্মগোপনে চলে যান। একটি সূত্র জানায়, তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। এদিকে এ ঘটনায় ঐ বছরের ৪ আগস্ট মাসুদ আহমদ চৌধুরীর মুন্নার বড়ভাই মাহমুদ আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর র্যাব-৯ সদস্যরা আনসার, বোরহান ও রানুকে আটক করে এবং তার মধ্যে আনসার ও বোরহান আদালতে জবানবন্দী দেন। ঘটনার পর ঐ বছরের ২৭ আগস্ট পুলিশ সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদী থেকে শামছুল ইসলামের মরদেহের কিছু অংশ, পাঞ্জাবী ও টুপি উদ্ধার করে। পরে সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।
মামলার তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৫ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানী শেষে চলতি বছরের ১০ মার্চ মামলাটি সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর হয়। গত ২৪ এপ্রিল মামলার যুক্তি তর্ক ও শুনানি হয়। রায় হলো ৬ মে।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, মাসুদ আহমদ চৌধুরী তার বাবাকে বলেছিলেন মীরবক্সটুলার বাসার সামনের অংশ তার নামে লিখে দিতে। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মুন্না প্রায়ই তাকে মানসিক নির্যাতন করতেন। শেষ পর্যন্ত সম্পত্তির লোভে বাবাকে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় তাঁদের বাড়ি থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীতে ফেলে হত্যা করেন।