উষ্ণ অভ্যর্থনায় স্বদেশে খালেদা জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৫, ১০:০৬:৫৬ অপরাহ্ন
ফুল, পতাকা, স্লোগানে পথে পথে শুভেচ্ছা
জালালাবাদ রিপোর্ট : কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউ-বা খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরে আছেন। ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’-এমন নানা স্লোগান। আর এভাবেই পথে পথে উষ্ণ অভ্যর্থনায় আর নেতা-কর্মীর ভালোবাসায় দেশে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ ৪ মাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার পর দেশে ফিরেছেন তিনি। কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ উড়োজাহাজ (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বের হয়। এ সময় লাখো নেতা-কর্মী পতাকা নেড়ে দলীয় প্রধানকে শুভেচ্ছা জানান।
এর আগে বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৭ বছর পর দেশে এসেছেন তাঁর পুত্রবধূ তারেক রহমানের স্ত্রী সিলেটী কন্যা ডা: জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জরুরী অবস্থার সময়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনেই ছিলেন ডা: জোবাইদা।
আরও এসেছেন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ ১৪ জন।
সকাল থেকেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিলো উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীর স্রোত।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজা’য় যান। বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় যাওয়ার সময় পথে পথে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী। বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তিনি ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান।
দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় হুইলচেয়ার নিয়ে চলাচল করা খালেদা জিয়া বাসা ‘ফিরোজা’য় গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় দুই পাশে দুই পুত্রবধূ তাকে ধরে রাখেন।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে ফিরোজাসংলগ্ন এলাকায় ভিড় করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা। এছাড়া তাঁরা নানা ব্যানার-ফেস্টুন বহন করেন। তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।
ফিরোজা ও এর আশপাশের এলাকায় আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফিরোজার প্রবেশপথ গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। সড়কটির দুই পাশে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফিরোজার সামনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়; পাশাপাশি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’-এর সদস্যরা।
এদিকে, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনেকটাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তার সাথে আসা ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ১৪ ঘণ্টার জার্নি করার পর রাস্তায় জনতার উচ্ছ্বাস ও অভিনন্দন দেখে তিনি আপ্লুত। কিন্তু একজন রোগী চিকিৎসাধীন যেহেতু, উনার পক্ষে যদিও এটি কষ্টকর। তারপরেও উনি জনগণের নেত্রী, জনগণের পাশে থাকতেই পছন্দ করেন, সেজন্য আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ যারা উপস্থিত থেকে উনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন-তাদের উনি শুভেচ্ছা ও সালাম জানিয়েছেন।
ডা. জাহিদ বলেন, জুবাইদা রহমান দেশে ফিরেছেন। ১৭ বছর সরকার তাকে দেশে আসতে দেয়নি। তাদের মেয়ে জাইমা রহমান কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে একটা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও এই মাঠে এসে নেতৃত্ব দেবেন।
তিনি বলেন, ব্রিটেন থেকে যে নেতৃত্ব তিনি দিচ্ছেন, অর্থাৎ শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিনি চলে আসবেন।
বিএনপি নেত্রী ঢাকায় পৌঁছানোর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানবন্দরের সামনে বলেন, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের জন্য ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন।