উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন দেখছেনা অন্তর্বর্তী সরকার!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২৫, ১১:২২:১২ অপরাহ্ন
এবার সংকোচনমূলক ও আকারে ছোট বাজেট
টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত
জালালাবাদ রিপোর্ট : প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এবারের বাজেট হবে সংকোচনমূলক। উচ্চাভিলাষী বাজেটের ধারাবাহিকতা থেকে সরে এই পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার বলছে, তারা উচ্চাভিলাষী কোন স্বপ্ন দেখছেনা। এ নিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করবেন। জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাজেটের আকার ছোট এবার ছোট হচ্ছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় তা ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। টাকার দাম ক্রমাগত কমে যাওয়ায় তা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন-শুধু সুদ পরিশোধের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যেতে পারে। এটি মোট বাজেটের ১৬ দশমিক আট শতাংশ বা এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে মূল ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ধরলে বাজেটের ওপর খরচের চাপ আরও বাড়বে। ঋণ পরিশোধে খরচ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অন্যান্য খাতে খরচের সুযোগ কমছে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ও পরিচালন বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে আগামী অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ভর্তুকির মতো খরচ চলতি অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজস্ব আদায় কম হওয়া সত্ত্বেও কাঠামোগত সংস্কারই আগামী বাজেটে মূল লক্ষ্য থাকবে অন্তর্বর্তী সরকারের।
আসন্ন জাতীয় বাজেটে ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ওপর করের চাপ কমাতে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো ও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম শিথিলসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পৌনে চার লাখ টাকা করার কথা ভাবছে।
এদিকে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে অত্যান্ত বাস্তব ভিত্তিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নেওয়া হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংক থেকে ধার করে, টাকা ছাপিয়ে আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করব না। ধার করে বড় বড় মেগা প্রকল্প করব না। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মোটামুটি বাজেটটা আমরা বাস্তবায়ন করব। বিরাট একটা গ্যাপ নিয়ে করব না। প্রকল্প, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন করব অত্যন্ত বাস্তবভিত্তিতে।
সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, পরবর্তী সরকারের জন্য এই বাজেট গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমরা চাই তারা সংস্কার চালিয়ে যাবে।
প্রস্তাবিত সংস্কারে খরচ বাড়ানোর পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। মূল উদ্যোগের মধ্যে আছে-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে করনীতি ও কর প্রশাসনকে আলাদা করা। প্রশাসনিক সংঘাত এবং দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমানো। এই সংস্কারের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়বে এবং করদাতাদের হয়রানি কমবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
সরকার সব পণ্যে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসানোর পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে অসমভাবে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বোর্ড নতুন কর ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন। মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে সতর্ক করে বলা হয়েছে-রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কম হওয়ায় অন্যান্য বিনিয়োগে সরকারের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক জাতীয় শুল্কনীতির আওতায় করের টাকা স্বচ্ছভাবে খরচের কাঠামো, অভিন্ন ভ্যাট হার এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমানোসহ একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে।
আগামী বাজেটে দেশের ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া হবে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এই এজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএমএফ দেবে ঋণের কিস্তি :
মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আসছে, যা চেয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিনিময় হার নমনীয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি হয়েছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের এই শর্ত মেনে নেওয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তার চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে দুই কিস্তির অর্থ ছাড় করতে যাচ্ছে। সংস্থাটি ২ কিস্তিতে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার দেবে। আগামী মাস, অর্থাৎ জুনের মধ্যেই মিলতে পারে এই অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। তিনি অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইএমএফের ঋণছাড়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হতে পারে।