বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার সীমান্তে আরো ১৫৩ জন পুশইন করল বিএসএফ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৫, ৬:১২:৪৪ অপরাহ্ন
বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও সিলেটের বিয়ানীবাজার সীমান্তে শনিবার রাতে আরো ১৫৩ অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে বিএসএফ। ১২১ জনকে বড়লেখার পাল্লাথল সীমান্ত ও ৩২ জনকে বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। রোববার ভোর ও সকালে বিজিবি তাদেরকে আটক করে। নাম-ঠিকানা শনাক্তের পর দুপুরে বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার থানায় তাদের সোপর্দ করেছে বিজিবি।
বিজিবি ও স্থানীয় জনসাধারণের কড়া নজরদারি সত্বেও বিএসএফের পুশইন অব্যাহত থাকায় সীমান্তে থামছে না উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বড়লেখা সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে এ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল থেকে) মোট ২৭২ জনকে আটক করলো বিজিবি। এদেরকে সীমান্তে এনে বিএসএফ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছিল। তবে, স্থানীয় সূত্রের দাবি গত এক মাসে এই রুট দিয়ে ৫ শতাধিক অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে বিএসএফ।
জানা গেছে, রোববার ভোরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশকালে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১২১ জনক আটক করে বিজিবি। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের ঠেলে পাঠিয়েছে। আটককৃতরা বাংলাদেশি নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত হয়। এরমধ্যে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লাতু বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা ৭৯ জনকে এবং নিউ পাল্লাথল বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা ৪২ জনকে আটক করে। পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে সকালে বিজিবি তাদের বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করেছে।
অপরদিকে বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম বিওপির বিজিবি সদস্যরা রোববার ভোরে বিএসএফের পুশইনকৃত নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৩২ জন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে। আটককৃতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিজিবি তাদেরকে বিয়ানীবাজার থানায় সোপর্দ করেছে।
পুশইন হওয়া নারী ও পুরুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রায় সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা তবে তারা প্রায় ১৫ বছর পূর্বে ভারতে পাড়ি জমান। গত ২মে তাদের কর্মস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়। এরপর ৩ দিন আগে হেলিকপ্টারে করে তাদের গৌহাটি বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের প্রত্যেকের সাথে থাকা টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, কাপড়-চোপড় রেখে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করে তারা। অনেককে খাবার পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
আটককৃতরা জানান, বিএসএফ তাদেরকে সীমান্তে নিয়ে জিরো লাইনের কাছাকাছি জড়ো করে রাখতো। বিজিবির টহল টিমের চোখ ফাঁকি দিয়ে গভীর রাতে বিভিন্ন দুর্গম এলাকা, বিল ও খাল দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশ সীমানা পার করে দিয়েছে। সবার সাথেই বিএসএফ অমানবিক আচরণ করেছে। আটককৃতদের প্রায় সবাই খাল-বিল সাঁতরিয়ে ভিজে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করেছে।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান পিপিএম জানান, বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে নির্ঘুম টহল দিচ্ছে। পুশইন ঠেকাতে বিজিবিকে সহযোগিতা করার জন্য সীমান্তের গ্রাম পুলিশ ও আনসারদের টর্চলাইট ও বাঁশি দেওয়া দিয়েছে বিজিবি। বিজিবি, গ্রাম পুলিশ, আনসার জনপ্রতিনিধিরাও পুশইন ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন। কিন্তু বিএসএফ তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মারাত্মক ঝুঁিকপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ বাংলাদেশিদের পুশইন করছে। শনিবার ভোরে বড়লেখা সীমান্তে ১২১ জন ও বিয়ানীবাজার সীমান্তে ৩২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এরা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। পরিচয় শনাক্তের পর তাদের ১২১ জনকে বড়লেখা থানায় ও ৩২ জনকে বিয়ানীবাজার থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
বড়লেখা থানার ওসি মো. আবুল কাশেম সরকার জানান, বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে নারী ও শিশুসহ ১২১ জনক আটক করে দুপুরে তাদেরকে বড়লেখা থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি। তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা এসে জিম্মায় নিতে চাইলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উজ্জামান জানান, ৩২ জনকে থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি। আদালতের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হবে।