রক্ষা করতে হবে নগরীকে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:৪৭ অপরাহ্ন
বন্যা ও জলাবদ্ধতা এখন অনেকটা সাংবাৎসরিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেটের নগরবাসীর জন্য। প্রায় প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর অধিকাংশ এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল। এর কোন সুরাহা ও সমাধান যেনো নেই। নেই সমাধানের কোন বাস্তব উদ্যোগ বা পদক্ষেপ।
গত বছরের মতো বড়ো ধরনের বন্যা হলে এবারও কি একই দুর্ভোগ পোহাতে হবে সিলেটবাসীকে? এবার বন্যা মোকাবেলায় কতোটুকু প্রস্তুত সিলেট? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্যে। প্রধান প্রকৌশলী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। আমাদের কোন শহর রক্ষা বাঁধ নেই। ফলে নদীর পানি বেড়ে গেলে আমাদের কিছুই করার নেই। তখন পানিতে তলিয়ে যাবে নগরী। এ যেনো এক অসহায় আত্মসমর্পণ।
গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘শহর রক্ষা বাঁধ কতদূর” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, সুরমা ঘিরেই সিলেটের জনজীবন। সুরমার তীরেই সিলেট নগরী। কালিঘাট, বন্দরবাজার, কাজিরবাজার, লামাকাজিসহ প্রসিদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী সব বাজারে দীর্ঘকাল যাবৎ জমজমাট বাজার পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ইদানিং অল্প বৃষ্টিতেই এসব বাজারে পানি ওঠে যায়, বাজার ছাড়িয়ে জনপদে গড়ায় সেই পানির তাণ্ডব। তাছাড়া গত বছর থেকে একটু বৃষ্টিতেই সিলেট নগরী ও আশপাশের জনপদ পানিবন্দী হওয়ায় সুরমা আবারও আলোচনায় আসে। জোরালো হয় সুরমা-কুশিয়ারার খননের বিষয়টিও। শেষ পর্যন্ত জনদাবির মুখে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সদর ও বিশ্বনাথ এই দুই উপজেলায় সুরমার ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়।
গত ২১ জানুয়ারী ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লামাকাজি থেকে কুশিঘাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যা অর্ধেক শেষ হয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় বাকী কাজ আর এ বছর শেষ হবে না। নদী খননের পাশাপাশি শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি ওঠে গত বছরের মাঝামাঝি সিলেট নগরীতে ভয়াবহ বন্যার পর। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে প্রকাশ, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি সমীক্ষা চালাচ্ছে। সমীক্ষা শেষে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। অনেকেই দাবি করছেন দ্রুত পুরো নদী খননের বিষয়টি হাতে নেয়া হোক এবং শহর রক্ষা বাঁধের কাজ মাঠ পর্যায়ে হোক।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বন্যা ও জলাবদ্ধতা এদেশের জনগণ এবং অর্থনীতির জন্য একটি পুরোনো বড়ো সমস্যা। জলাবদ্ধতার জন্য এতোদিন শুধুমাত্র নালা-নর্দমা ও ছড়া খালকে দায়ী করা হয়েছে। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতার নদী খননের গুরুত্ব চাপা পড়ে গেছে। এদিকে তেমন কেউ খেয়াল করেননি। এখন বুঝা যাচ্ছে সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা ও বন্যার জন্য বিশেষভাবে দায়ী সুরমা নদীর ভরাট হয়ে যাওয়া। দেশের অন্যান্য নদনদীর মতো সুরমা নদীও ভালোভাবে খনন হয়নি বহুকাল যাবৎ। স্বাধীনতার পর সরকার দেশের নদনদী খননের দিকে মনোযোগ দিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নদীতে ড্রেজিং হলেও বড় কোন পরিকল্পনা নেয়া হয়নি এক্ষেত্রে। ফলে গত অর্ধ শতকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারাসহ দেশের প্রায় সবগুলো নদনদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। কমে গেছে নাব্যতা তথা পানি ধারণ ক্ষমতা। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে এসব নদনদী পানিতে পূর্ণ হয়ে আশপাশের শহর নগর ও জনপদগুলো প্লাবিত করছে। নদ নদী পানিপূর্ণ হয়ে ওঠায় সিলেটসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন নগরী ও শহরের জমা বৃষ্টি পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না। বিভাগীয় নগরী সিলেটকে উপর্যুপরি জলাবদ্ধতা ও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য এখন সংশ্লিষ্ট নদী খননের পাশাপাশি শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ অতীব জরুরী। কারণ বিগত বন্যায় নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যসহ যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা রীতিমতো শংকা সৃষ্টিকারী। দেশের এই আর্থিক সংকটকালে ব্যবসা বাণিজ্যে যদি বন্যা ও জলাবদ্ধতার জন্য বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির চাপ ও প্রভাব পড়ে তবে তা হবে বিপর্যয়কর। আমরা এই কঠিন সত্য ও বাস্তবতা উপলব্ধি করে অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।