‘স্পিরিট অব হাইয়ার কোর্টস’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি বিচারপতি সারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, এমন রায় দেবো, যা ৫০ বছর পরও মানুষ মনে করবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রুলের শুনানিতে তারা এমন মন্তব্য করেন। তারা আগে বলেন, এটি অনেক বড়ো মামলা। আমরা এই মামলায় এমন রায় দিতে চাই কেউ যেনো বলতে না পারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। যেটাকে ন্যায়বিচার বলে রায়ের মাধ্যমে সেটাই প্রতিষ্ঠা করবো। তখন জনগণ দেখবে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা কেমন ছিলো।
লক্ষণীয় যে, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এছাড়া আরো কিছু বিষয়ে আইন পাশ করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। এর আগে পঞ্চম সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, এই মামলাটি কোনো পক্ষের নয়, এটি এখন পুরো বাংলাদেশের মামলা। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবি ড. শরিফ ভুইয়া বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর একটি ‘মোটিভেটেড অ্যামেন্ডমেন্ট’ অর্থাৎ দুরভিসন্ধিমূলক সংশোধনী। দেশে সুষ্ঠু নিরপক্ষে নির্বাচন যাতে না হয়, বার বার যাতে একই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে সে উদ্দেশ্যেই মূলত পঞ্চম সংশোধনী আনা হয়।
একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশে প্রথম কেয়ারটেকার সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সকারের দাবি উত্থাপন করেছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। পরে সেটা অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও জনপ্রিয় দাবিতে পরিণত হয় এবং আন্দোলনের মাধ্যমে পাশ হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। কিন্তু এক সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেই এই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায়, স্বৈরাচারী কায়দায়। এক্ষেত্রে সংবিধান কিংবা বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও প্রকৃত রায় তথা অভিপ্রায়ের প্রতি তোয়াক্কা করেনি হাসিনা সরকার। এখন বিষয়টি আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে রিট আকারে। এই রিট প্রসঙ্গে হাইকোর্টের দু’জন বিচারপতির বেঞ্চের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে শুরুতে। তাদের বক্তব্যে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের চেতনা অর্থাৎ প্রকৃত স্পিরিট অব হাইয়ার কোর্টস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশের বিচার বিভাগ এমনি বলিষ্ট, ন্যায়নিষ্ট ও উদ্দীপিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা হওয়া উচিত, যা জনগণের আশা আকাংখা ও অধিকার রক্ষায় ভ্যানগার্ড বা অতন্দ্র প্রহরীরর ভূমিকা পালন করবে। বিশে^র প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন শক্তিশালী ও ন্যায়পরায়ণ বিচার বিভাগ রয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য তো বটেই এমনকি পাকিস্তান ও ভারতের বিচার বিভাগের কথাও বলা যায়। এসব দেশের বিচার বিভাগ যেনো হিমালয়সম দৃঢ়তা ও মর্যাদার অধিকারী। অথচ হাসিনা সরকার বিগত দেড় দশকের শাসনামলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিচার বিভাগকে প্রায় ধ্বংস করে ক্ষমতা কুক্ষীগতকরণ ও দলীয় করণের পৈশাচিক থাবায়। গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর বিচার বিভাগ বিশেষভাবে উচ্চ আদালত আবার তাদের মর্যাদা ফিরে পেতে শুরু করেছে, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে স্বমহিমায়। দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত হাসিনা সরকারের সময়ের অদক্ষ অযোগ্য বিচারপতিদের অপসারণ করে যোগ্য ও অভিজ্ঞদের নিয়োগদানের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তাই আশা করা যায় বিচার বিভাগের সুদিন শীঘ্রই ফিরে আসবে, দেশের বিচারপ্রার্থী মানুষসহ সকল স্তরের জনগণের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে গণমানুষের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেবে বিচার বিভাগ।