আনন্দময় স্কুল ও বুদ্ধিভিত্তিক শিশু জাতির সম্পদ : জালাল উদ্দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭:১৫:১৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেছেন, বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের প্রাইমারী শিক্ষা অনেক পিছিয়ে আছে। প্রাথমিকেই আমাদের শিশুদের একটা বিশাল অংশ নানা কারণে ঝরে পড়ে। অথচ আজকের শিশুরা আগামী দিনে জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। তাই প্রাইমারী থেকেই তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে প্রয়োজন মানসম্মত সময়োপযোগি শিক্ষা। এক্ষেত্রে ব্রাকের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। আনন্দময় স্কুল ও বুদ্ধিভিত্তিক শিশুরাই জাতির সম্পদ।
তিনি শুক্রবার সকালে সিলেটে ব্র্যাক একসেলারেটেড এডুকেশন মডেল বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মুল্যবোধ, জীবন দক্ষতা, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সফলতার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতার বিষয়ও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন- কাউকে না কাউকে এই ব্যর্থতার দায়ভার নিতেই হবে, তা না হলে এই ব্যর্থতা উত্তরণ ঘটানো যাবে না।
সিলেট সদরের পীরেরবাজারস্থ ব্রাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম। ব্র্যাকের এডুকেশন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এন্ড মাইগ্রেশন প্রকল্পের পরিচালক সাফি রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসার, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্রাক শিখন স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন। অনুষ্ঠানে আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লাঠি নৃত্য প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা এবং সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষকগণ ব্র্যাক এর বিদ্যালয়গুলোকে ইতিবাচক সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সাথে আরও বেশি সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ প্রদান করেন। ব্র্যাক প্রকল্পের বিদ্যালয়ের কর্মসূচি যেন কোনোভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে ব্যহত না করে সেদিকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। সরকারি কর্মকর্তাগণ ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- ব্রাকের ইএমডিসি কর্মসূচি ব্যবস্থাপক কামরুস সালাম।সভাপতির বক্তব্যে সাফি রহমান খান বলেন, আমাদের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত তুলনামুকভাবে দুর্বল। যার ফলাফল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়ে। শুধু তাই নয় এই দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রেও ভোগান্তিতে ফেলে।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ এর আকস্মিক প্রাদুর্ভাবের ফলে, বাংলাদেশের সকল স্কুল ১৮ মাসের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এসময় শ্রেণিকক্ষে প্রচলিত সকল শিখন-শেখানো কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এই দীর্ঘস্থায়ী বন্ধে, ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হারও বাড়তে থাকে। যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি এর প্রকল্প ‘Educate the Most Disadvantaged Children in Bangladesh (EMDC)’ এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একসেলারেটেড মডেলে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ১০ মাসের এই মডেলের মধ্যে রয়েছে ৪ মাসের একটি ক্যাচ-আপ কম্পোনেন্ট (Bridge Course) এবং ৬ মাসের নির্দিষ্ট শ্রেণিভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়া, যা শিক্ষার্থীদের পূর্বের শিখন ঘাটতি পূরণ করে পুনরায় আনুষ্ঠানিক স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে।
বর্তমানে ‘ঊগউঈ’ প্রকল্পটির তৃতীয় বর্ষ চলছে এবং প্রায় ২৮ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী ১১৫০ টি ব্র্যাক স্কুল থেকে এই মডেলে শিক্ষা সম্পন্ন করেছে। আরো ২০০০০ শিক্ষার্থী ৮০০টি ব্র্যাক স্কুলে অধ্যয়ণরত আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রকল্পটি শেষে ১,৪৭,৫০০ শিক্ষার্থী প্রায় ৫৯০০টি এক কক্ষ বিশিষ্ট স্কুল থেকে ১০ মাসের একসেলারেটেড মডেলে শিক্ষা লাভ করবে।