পর্যটকে মুখর টাঙ্গুয়ার হাওর
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০২৫, ৮:০৯:০৭ অপরাহ্ন
জসীম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ:
আন্তর্জাতিক রামসার সাইট খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক আঁধার। বর্ষায় থৈ থৈ জল হৃদয়ে দোলা দেয়। কুচি কুচি ঢেউ খেলে হাওরের বুকে। সেই ঢেউয়ের তালে নাও দোলে এক অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। হাওরের জলে ভেসে আকাশের ছোঁয়া পেতে চায় মন। এরকম আনন্দে মাতামাতি করেন পর্যটকরা। এবারের ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকরা মুখর করে রেখেছেন হাওর। হাউসবোটগুলো ভাসছে মেঘালয়ের নীলগহীনের হাওরটিতে। পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত এখন হাওর।
পর্যটকরা জানান, জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর হাওরের পাশে বাড়তি আনন্দ দেয় লাকমা ছড়া, বড়গোপটিলা (বারেক টিলা), শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক)।
ঢাকা থেকে এসেছেন সজিব নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, আমরা একসঙ্গে ২০ জন বন্ধু মিলে একটি হাউসবোট ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে এসেছি। একসাথে অনেক হাউসবোট মিলে হাওর ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। ঢাকার শিক্ষার্থী আফরোজ জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, হাওরে বর্ষায় জল থৈ থৈ করে। পাহাড়, লেক, ঝর্ণা দেখতে দেখতে প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখা যায়। এবারের ঈদে নৌকা ভ্রমণটাই আলাদা মজার।
সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর। এটি তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। এ হাওরে ৯ কুড়ি কান্দা ও ৬ কুড়ি বিল রয়েছে। হাওরে রয়েছে অসংখ্য জীববৈচিত্র। হাওরের পাশে গ্রামগুলো দুর থেকে দেখলো মনে হবে জলে ডুব দিয়ে আছে গ্রাম। পাশেই মেঘালয় পাহাড়। এ পাহাড় থেকে ৩৮ টি ঝর্ণা এসে পড়েছে হাওরে। পাহাড়, নীল আকাশ আর হাওরের স্বচ্ছ জলে একাকার হয় হাওরটিতে। এতে পর্যটক মন ধরা দেয় অপার্থিব প্রকৃতির সুন্দরের কাছে। সারারাত হাওরে বজরায় ভেসে প্রকৃতি ও জোছনা উপভোগ করেন। শীতল বাতাসে শান্ত হন।
জানা গেছে, পর্যটকদের কেন্দ্র করে হাওরে অন্তত ৬০০টি বড় ও ছোট হাউস বোট রয়েছে। ঈদে সবগুলোই পর্যটকরা বুকিং করেছেন। বিভিন্ন অনলাইস গ্রুপ অনলাইনে প্যাকেজ ঘোষণা করে ট্যুর পরিচালনা করছে।
হাউস বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ জানান, এবার লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের আগমন ঘটেছে বেশি। সব হাউসবোটই বুকিং শেষ। ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকরা হাওরে ভাসছেন। তিনি আরও জানান হাউসবোটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বোটে খাওয়া দাওয়াসহ রাত্রি যাপনের সব ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশে গোলাবাড়ি গ্রামে হাওর বিলাস নামে গেস্ট হাউস আছে। এছাড়া অনেকে তাহিরপুর ও টেকেরঘাটে অবস্থান করে। অনেকে সময় কম থাকায় স্পিডবোটে দ্রুত ঘুরে আসেন।
তাহিরপুর নৌ পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ রব্বানী জানান, এবারের ঈদে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০০ বোট ঢুকেছে হাওরে। বোটগুলো থেকে প্লাস্টিকের বোতল ফেলা হচ্ছে। অনেক হাউসবোটের পর্যটকরা পরিবেশ বিষয়ে সচেতন না। আমরা নীতিমালা মেনে হাউসবোট চালাচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, আমরা আগে থেকেই মানুষজনকে পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করেছি। আমরা জেনেছি প্লাস্টিকের বোতল ফেলা হচ্ছে হাওরে। কিন্তু কোন হাউসবোট থেকে ফেলা হচ্ছে শনাক্ত করা কঠিন। তবে যতদূর জানি বাহির থেকে পর্যটকরা পানিতে বর্জ্য ফেলেননা, মাইকে উচ্চস্বরে গান গাননা। দেশীয় মিনি বোটে স্থানীয় লোকজন ডিজে পার্টি করেন। পরিবেশ ঠিক রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নতুবা হাওরে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।