যাদুকাটার ইজারাদারকে ঢাকা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৫, ৯:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের শতকোটি টাকার যাদুকাটা বালুমহাল ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বিএনপির দুইপক্ষ। এই দ্বন্দ্বে ডিবি পুলিশকে কাজে লাগিয়ে সুনামগঞ্জের এক ইজারাদারকে ঢাকায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করে পৌণে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহবুবের বিরুদ্ধে।
শনিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন যাদুকাটা বালুমহালের ইজারাদার ও ভুক্তভোগী মো. নাছির মিয়া।
এব্যাপারে শীঘ্রই রাজধানীতে গিয়ে পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বরাবরে আবেদন এবং উচ্চ আদালতে মামলা করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে নাছির মিয়া বলেন, যাদুকাটা বালুমহাল বৈধভাবে ইজারা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইজারাদার রতন মিয়া হাইকোর্টে মামলা করেন। পরে ইজারা কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ হয়। তিনি দাবী করেন, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান যাদুকাটায় এর আগে অংশ দেবার দাবি করলে, অন্যপক্ষের মধ্যস্ততায় তারা ৩০ শতাংশ শেয়ার দিতে রাজি হন। এরপরও তিনি ঐ পক্ষকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন।
এই বিষয়ে গত ২৫ জুন হাইকোর্টে আইনী লড়াইয়ের জন্য যান তারা। সেখানে এই মহালের সাবেক ইজারাদার মো. রতন মিয়া ও কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে সেগুন বাগিচার দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজন নাছিরকে (তাকে) ডিবি সদস্য মিন্টু রোডের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে মানসিকভাবে নির্যাতন ও মামলা না চালানোর জন্য চাপ দেওয়া হয় তাকে। এক পর্যায়ে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান ডিবি অফিসে গিয়ে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবী করেন। এক পর্যায়ে ডিবির সদস্যরা তার কাছে থাকা ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে সাজানো মুচলেখায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন। এই বিষয়ে ডিবি বা পুলিশের উর্ধ্বতন কাউকে জানিয়েছেন কী-না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাছির মিয়া বলেন, রোববার (আগামীকাল) ঢাকায় গিয়ে পুলিশ প্রধানকে জানাবেন, একইসঙ্গে উচ্চ আদালতে মামলাও করবেন তিনি।
এ ব্যাপারে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান বললেন, যাদুকাটা ইজারা নেবার জন্য আমি সিডিউল কিনিনি। আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কারো কোন দ্বন্দ্ব নেই। তারা (নাছিররা) ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলনে বলা সবকিছুই সাজানো দাবী করেন মাহবুবুর রহমান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন জানান, কোন ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ কোথাও নিয়ে নির্যাতন করেছে, এ ধরণের কোন অভিযোগ তারা পান নি।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার আলোচিত বালুমহাল যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বাংলা ১৪৩২ সনে ভ্যাট ট্যাক্সসহ ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়। যাদুকাটা-১’এর ইজারা হয় নাছির মিয়ার নামে ও যাদুকাটা-২’এর ইজারা পান শাহ্ রুবেল নামের একজন ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় ও জেলা নেতাদের অনেকে শরিক রয়েছেন বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা এই বালু মহাল ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামানও গেল সরকারের শেষ সময়ে এই বালু মহালের ইজারায় শরিক ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।