শাবিতে চালু হবে নতুন ১৩ বিভাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:০০:২৫ অপরাহ্ন
থাকছে অ্যারোনটিক্যাল, মেকাট্রনিক্স ও মেটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং
তামিম মজিদ
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এভিয়েশন, আইন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চালু হতে যাচ্ছে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজসহ নতুন ১৩টি বিভাগ। ফলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর অত্যাধুনিক যুগপোযোগী বিভাগ চালু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আধুনিক বিজ্ঞানের এসব বিভাগ চালুর ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ রুপ পাবে শাবিপ্রবি, এমনটাই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর যুগের চাহিদার আলোকে কোনো বিভাগ খোলা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বরাবরই অবহেলিত ছিল শাবিপ্রবি। জুলাই গণঅভ্যুথানের পর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পান শিক্ষাবিদ ও গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যোল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি যোগদানের পর বিশ^বিদ্যালয়ে আধুনিক বিভাগ খোলার উদ্যোগ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৩টি বিভাগ চালুর অপেক্ষায় রয়েছে শাবিপ্রবি।
তথ্য বলছে, দেশের প্রথম বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । রসায়ন, পদার্থ ও অর্থনীতি, এই তিন বিভাগ দিয়ে ১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ বছরের একাডেমিক যাত্রায় ২৭টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট চালু হয়েছে। তবে গত ১৭ বছরই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোনো বিভাগ খোলা হয়নি। বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদায় সমুদ্র বিজ্ঞান না থাকলেও ২০১৬ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূইয়া নিজ স্বার্থে এই বিভাগটি চালু করেন।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়েই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দিন দিন বাড়ছে উড়োজাহাজ বা বিমানের চাহিদা ও ব্যবহার। এসব বিমান তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন পড়ে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা উড়োজাহাজ প্রকৌশলীদের। দেশের এভিয়েশন সেক্টরের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে এই খাতে। এই অভাব পূরণ করতে শাবিপ্রবিতে চালু হচ্ছে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৌশল বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, কম্পিউটার ও নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলকে একত্রিত করে। এটি স্মার্ট সিস্টেম, পণ্য ডিজাইন ও তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রোবোটিক্স, অটোমেশন ও বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত। দেশে শিল্প কারখানার বিকাশ ঘটলেও এই সেক্টরে দক্ষ জনশক্তির অভাব। এটি পূরণ করতে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালুর উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বের অগ্রসরমান ও সম্ভাবনাময়ী ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলোর মধ্যে মেটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। মেটাল, সিরামিক, সেমিকন্ডাক্টার, পলিমার, কম্পোজিট সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে এ বিভাগ চালুর উদোগ নিয়েছে শাবিপ্রবি। এই তিনটি বিভাগের বাইরে চালু হবে, আরবান এন্ড রিজিওনাল প্লানিং, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মেসী, সয়েল সায়েন্স, বোটানী এন্ড জুওলজি, আইন, আল কুরআন দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ (শাহজালাল রহ: স্টাডিজ) ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে নতুন ১৩ বিভাগ চালুর বিষয়টি পাস হয়েছে। নতুন বিভাগ খোলার অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি অনুমোদন দিলেই আগামী ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব বিভাগ খুলবে শাবিপ্রবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এম আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আইন অঙ্গনে শাবিপ্রবির গ্র্যাজুয়েটদের শূন্যতা রয়েছে। আইন বিভাগ চালু দারুণ উদ্যোগ। এর বাইরে যে ১২টি বিভাগ চালু হবে, এগুলো চালু হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ রুপ পাবে শাবিপ্রবি।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ফখরুল ইসলাম জালালাবাদকে বলেন, বাংলাদেশে ৫৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমি কি এসব বিষয় মুখস্ত করে নিয়ে বসে আছে নাকি, কোন বিশ^বিদ্যালয়ে কোন বিভাগ খুলবে। অফিস সময়ের বাইরে ফোন দেওয়া ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না।
জানতে চাইলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী জালালাবাদকে বলেন, বিগত ১৭ বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গতানুগতিক বিভাগ খোলা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সম্ভাবনার হওয়া সত্ত্বেও অবহেলিত ছিল। তিনি বলেন, এটা সিলেটবাসীর গর্বের প্রতিষ্ঠান। অনেক সম্ভাবনাময় একটি বিশ্ববিদ্যালয়। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে যুগের চাহিদার আলোকে প্রকৌশল বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ খোলা হচ্ছে। এছাড়া ধর্মীয় ও নৈতিক জনশক্তি তৈরি করতে আল কুরআন দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগও খোলা হচ্ছে। এসব বিভাগ চালু হলে শাবিপ্রবি তার পূর্ণাঙ্গ রুপ পাবে। প্রফেসর ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক সূচনা হয়েছে। প্রায় ১৩টিরও বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা বদলে যাবে।