প্রবাসীদের দিকে নজর দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মে ২০২১, ৯:৫৪:৪১ অপরাহ্ন
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে এই প্রবাসী আয়। কিন্তু গত এক বছর যাবৎ করোনা মহামারির দরুন এই খাতটি নানা সমস্যা সম্মুখীন। ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও এই খাতটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।
চাকুরী হারিয়ে বহু প্রবাসী ইতোমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনাকালে চাকুরী হারিয়ে বিদেশ ফেরত কর্মীদের ৪৭ শতাংশই এখনো বেকার। দেশে ফিরে তারা কোন কাজ পাননি। দৈনন্দিন খরচ মেটাচ্ছেন পরিবারের আয় থেকে কিংবা আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে ধার দেনা করে। বিদেশ ফেরতদের ৯৮ শতাংশই এখনো তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। এখনো অনেকে দেশে ফেরত আসছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ থেকে ১৪ মাসে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। ৩৫ শতাংশ ছুটিতে দেশে এসে করোনার কারণে বিদেশ ফিরতে পারেননি। বিদেশ ফেরত এসব কর্মীদের অধিকাংশই বিদেশ ফেরত যেতে চান। দেশে ফেরত প্রবাসীদের বিদেশ ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি একটি বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ। বার বার লকডাউন আরোপের ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ অফিস আদালত ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণ এবং প্রবাসীদের বিদেশ ফেরত যাওয়া বিঘিœত হচ্ছে। লকডাউনের দরুন বিদেশ গমনের আনুষ্ঠানিক কার্য সম্পাদন করা যাচ্ছে না।
জনশক্তি সংগ্রহকারীরা জানান, সর্বশেষ লকডাউনের আগে ১ লাখেরও বেশী বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন ছিলো। এদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার শ্রমিকের চাহিদা ছিলো সৌদী আরব থেকে এবং ৪০ হাজার ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকেও ছিলো। জনশক্তি রফতানিকারণ এবং বায়রা-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, বিদেশ গমনপূর্ব প্রশিক্ষণ, মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ও ফিংগার প্রিন্ট প্রদান ইত্যাদি বিষয়সহ জনশক্তি রফতানি সংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। ফলে ভিসা সংশ্লিষ্ট কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বেসরকারী বমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গত ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করে। পরে শুধু ৫টি দেশে প্রবাসীদের জন্য ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়। দেশগুলো হচ্ছে সৌদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও সিংগাপুর। আটাব-এর তথ্য অনুসারে এক সপ্তাহে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের বিদেশ যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ফ্লাইট স্থগিত হওয়ায় তারা যেতে পারেননি। এছাড়া অনেক দেশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অবতরণ স্থগিত রেখেছে। ব্যুরো অব ম্যান পাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট এন্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুসারে, গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার শ্রমিক কর্মী বিদেশ গেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে বিদেশ গিয়েছেন ৪৯ হাজার ৫শ’ ১০ জন এবং মার্চে গিয়েছেন ৬১ হাজার ৬৫৩ জন। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে গিয়েছেন, যাদের অধিকাংশ গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
কথা হচ্ছে, প্রবাসীরা এদেশের সম্পদ। চাকুরী হারিয়ে যেসব প্রবাসী ইতোমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের ঋন প্রদান এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী। তারা যাতে দেশে কাজকর্মের সুযোগ পান কিংবা বিদেশ ফিরে যেতে পারেন, সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর নজর ও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কোন ধরণের উপেক্ষা বা অবহেলা যে প্রবাসীদের নিরুৎসাহিত ও হতাশ করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। চাকুরী হারিয়ে দেশে ফিরে আসা অনেক প্রবাসী বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলের প্রবাসী সরকারী ঘোষণাকৃত ঋণ পেতে নানা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ প্রবাসীবহুল সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীরা যুগ যুগ ধরে এদেশের অর্থনীতিতে মূল্যবান ভূমিকা রাখছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ও যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের প্রদত্ত ও সংগৃহীত অর্থ-মুক্তিযুদ্ধকে সামনের দিকে নিয়ে গেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও দেশগঠনে এই প্রবাসীদের অবদান অবিস্মরণীয়। এ অবস্থায় আমরা সিলেট অঞ্চলসহ দেশের সকল প্রবাসীদের কল্যাণের বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিদেশফেরত প্রবাসীদের যাতে দেশে কর্মসংস্থান হয় কিংবা বিদেশ ফিরে যেতে পারেন এবং বিদেশ গমনেচ্ছুরা বিনা বাধা ও জটিলতায় বিদেশ যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।